সম্প্রতি ভারতে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে সক্রিয় হয়েছে ভারত সরকার। এই উদ্দেশ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের তরফে পাঠানো হচ্ছে প্রতিনিধিদল। এই প্রতিনিধিদের কাজ শুধু তথ্য তুলে ধরা নয়, বরং বিশ্ববাসীর সামনে পাকিস্তানের আসল রূপ উন্মোচন করা এবং ভারতের অবস্থানকে স্পষ্ট করে দেওয়া।
তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদল সম্প্রতি জাপান সফর করে। ওই দলে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee), যিনি টোকিয়োতে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে এক আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি পাকিস্তানকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, “ভারত ভয়ের কাছে নতজানু হবে না। তুমি যে ভাষা বোঝো, সেই ভাষাতেই আমরা জবাব দেব।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন যে, ভারত এখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে কেবল প্রতিরক্ষার কৌশলে আবদ্ধ থাকবে না, বরং আক্রমণাত্মক পথে জবাব দেবে।
উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন এলাকায় পর্যটকদের উপরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন নিরীহ মানুষ। এই হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামক একটি জঙ্গি সংগঠন, যা মূলত পাকিস্তানের কুখ্যাত জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার ছায়াসংগঠন বলে জানা যায়। এই ঘটনার জবাবে ভারত মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ৯টি স্থানে আঘাত হানে, যেটিকে “অপারেশন সিঁদুর” নামে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এই অভিযানে ভারতীয় সেনা নিখুঁতভাবে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, সেনা অভিযানটি কৌশলগতভাবে এমনভাবে পরিচালিত হয় যাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কোনও পরিকাঠামো কিংবা সাধারণ নাগরিকদের কোনও ক্ষতি না হয়। ভারতের এই মানবিক ও কৌশলী অবস্থান বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে।
ভারতের এই সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপকে আরও কার্যকর করে তোলার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তথ্য, ছবি এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদন তুলে ধরা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে জনতা দল ইউনাইটেডের সাংসদ সঞ্জয় ঝার নেতৃত্বে গঠিত প্রতিনিধিদলে অংশ নেন বিভিন্ন দলের সাংসদরা, যার মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও অন্যতম। এই দলটি বিশ্বব্যাপী একাধিক দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে মদতের প্রমাণ তুলে ধরছে।
এই প্রতিনিধি দলের সফর থেকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে—যে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যতই বিভক্ত হোক না কেন, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাই এককাট্টা। দলের পরিচয় ভুলে সবাই ভারতের স্বার্থে একত্রে কথা বলছেন, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অবস্থানকে আরও জোরালো করে তুলছে।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু অতীতে আন্তর্জাতিক মহল বারবার নীরব থেকেছে। তবে ভারত এবার কৌশল বদলেছে। শুধু যুদ্ধের ময়দানেই নয়, কূটনৈতিক মঞ্চেও লড়াইয়ে নেমেছে ভারত। আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের মুখোশ টেনে ছিঁড়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা আগামী দিনে সন্ত্রাসবাদবিরোধী বৈশ্বিক জোটকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে।