আইপিএলে ৩৫ বলে শতরান করে ইতিহাস গড়লেন বৈভব

রাজস্থান রয়্যালসের (Rajasthan Royals) ১৪ বছর বয়সী প্রতিভাবান ক্রিকেটার বৈভব সূর্যবংশী সোমবার (Vaibhav Suryavanshi) গুজরাট টাইটান্সের (Gujarat Titans) বিরুদ্ধে ম্যাচে একাধিক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)…

Vaibhav Suryavanshi

রাজস্থান রয়্যালসের (Rajasthan Royals) ১৪ বছর বয়সী প্রতিভাবান ক্রিকেটার বৈভব সূর্যবংশী সোমবার (Vaibhav Suryavanshi) গুজরাট টাইটান্সের (Gujarat Titans) বিরুদ্ধে ম্যাচে একাধিক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। বৈভব মাত্র ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ভারতীয় সেঞ্চুরিয়ান হয়েছেন। তিনি ভারতের প্রাক্তন অলরাউন্ডার ইউসুফ পাঠানের (২০১০ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ৩৭ বলে) রেকর্ড ভেঙেছেন। এছাড়াও, ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সে তিনি আইপিএলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান হয়েছেন, মণীশ পাণ্ডের (১৯ বছর ২৫৩ দিন) রেকর্ড অতিক্রম করে।

   

বৈভব সূর্যবংশী শুধু আইপিএলেই নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেও একটি বড় রেকর্ড ভেঙেছেন। তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান (১৪ বছর ৩২ দিন) হয়েছেন।  মহারাষ্ট্রের বিজয় জোলের রেকর্ড (২০১৩ সালে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ১৮ বছর ১১৮ দিনে সেঞ্চুরি) তিনি ভেঙে দিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে, এটি আইপিএলের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি, যা ক্রিস গেইলের ২০১৩ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে ৩০ বলে সেঞ্চুরির থেকে মাত্র পাঁচ বল পিছিয়ে।

রাজস্থান রয়্যালসের ২১০ রানের লক্ষ্য তাড়া করার সময়, বিহারের এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান চতুর্থ ওভারে ভারতের ১০৫ টেস্টের অভিজ্ঞ পেসার ইশান্ত শর্মার উপর ঝড় তুলেছিলেন। তিনি ইশান্তের ওভারে তিনটি ছক্কা এবং দুটি চার সহ ২৮ রান তুলেন। এছাড়াও, দশম ওভারে অভিষেককারী করিম জানাতের বিরুদ্ধে তিনি ৩০ রান আদায় করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার বলে ১০১ রানে (৩৮ বল) আউট হন।

এর আগে, গুজরাট টাইটান্সের অধিনায়ক শুভমন গিল ৫০ বলে ৮৪ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে ২০৯/৪-এ নিয়ে যান। গিল তার চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি করেন, যেখানে পাঁচটি চার এবং চারটি ছক্কা ছিল। তিনি ফর্মে থাকা সাই সুদর্শনের (৩০ বলে ৩৯) সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ৯৩ রান যোগ করেন।

জস বাটলার (২৬ বলে অপরাজিত ৫০) রাজস্থানের বোলিং আক্রমণকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত করেন। তিনি চারটি ছক্কা এবং তিনটি চার মেরে তার প্রাক্তন দল রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে রিভার্স পুল এবং র‍্যাম্প শট নিখুঁতভাবে খেলেন। গিল ক্রিকেটীয় বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে লেগ-সাইডের ছোট বাউন্ডারিটি বেছে নেন, এবং রাজস্থানের বোলাররা তার প্যাডের দিকে বল করার ভুল করেন। তিনি স্কোয়ার লেগ এবং মিড-অনের উপর দিয়ে পিক-আপ পুল শট খেলেন, যার মধ্যে যুধবীর সিংয়ের বলে ফ্লিক করা ছক্কাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, তার একটি নিখুঁত অফ-ড্রাইভ ছিল, এবং তার উদ্বোধনী সঙ্গী সুদর্শন তাকে বেশিরভাগ স্ট্রাইক দিয়ে সহায়তা করেন। সুদর্শন আউট হওয়ার পর, বাটলার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার এক ওভারে তিনটি ছক্কা এবং একটি চার সহ ২৪ রান তুলে রাজস্থানের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দেন।

বৈভবের অসাধারণ যাত্রা

বৈভব সূর্যবংশী, বিহারের সমস্তিপুর জেলার তাজপুরে ২৭ মার্চ ২০১১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি ক্রিকেট খেলা শুরু করেন, এবং তার প্রথম কোচ ছিলেন তার বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী। ২০২৪ সালে, মাত্র ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে তিনি বিহারের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক করেন, যা তাকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ রঞ্জি খেলোয়াড় করে। এর আগে তিনি ভিনু মানকড় ট্রফিতে বিহারের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেছিলেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, বৈভব ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যুব টেস্টে অভিষেক করেন এবং ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করে ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম যুব টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। এই ইনিংসে তিনি ১৪টি চার এবং পাঁচটি ছক্কা মারেন। তিনি ২০২৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে ভারতের হয়ে ১৭৬ রান করেন, যার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুটি হাফ-সেঞ্চুরি ছিল।

২০২৪ সালের নভেম্বরে, মাত্র ১৩ বছর বয়সে, তিনি আইপিএল নিলামে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ১.১ কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন, যা তাকে আইপিএলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় করে যিনি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে চুক্তি করেছেন। ২০২৫ সালের ১৯ এপ্রিল, তিনি লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে আইপিএল অভিষেক করেন এবং প্রথম বলেই ছক্কা মেরে ২০ বলে ৩৪ রান করেন।

রেকর্ড ভাঙার দিন

গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে বৈভবের ৩৫ বলে সেঞ্চুরি ছিল কেবল একটি ইনিংস নয়, বরং বিশ্ব ক্রিকেটে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিনি মাত্র ১৭ বলে হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌঁছান, যা আইপিএলের সর্বকনিষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড। তার ইনিংসে ছিল ৭টি চার এবং ১১টি ছক্কা, যা তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শৈলী এবং অপ্রতিরোধ্য মনোভাব প্রদর্শন করে।

রাজস্থানের হয়ে তার এই ইনিংসে তিনি যশস্বী জয়সওয়ালের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে দ্রুত রান তুলে দলকে শক্ত ভিত্তি দেন। চতুর্থ ওভারে ইশান্ত শর্মার বিরুদ্ধে তার আক্রমণ ছিল অবিশ্বাস্য। তিনি স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে ছক্কা, মিডউইকেটের উপর দিয়ে আরেকটি ছক্কা এবং মিড-অফের উপর দিয়ে চার মারেন। এমনকি তার একটি শট এজ হয়ে থার্ড ম্যানের উপর দিয়ে ছক্কা যায়। দশম ওভারে করিম জানাতের বিরুদ্ধে তিনি ছয়টি চার এবং ছক্কার সমন্বয়ে ৩০ রান তুলেন, যা তার শক্তি এবং নির্ভীকতার প্রমাণ দেয়।

কোচ এবং দলের প্রশংসা

রাজস্থান রয়্যালসের কোচ রাহুল দ্রাবিড় এই ইনিংসের পর উঠে দাঁড়িয়ে বৈভবকে অভিনন্দন জানান। তার এই পারফরম্যান্স দলের সকলকে উৎসাহিত করেছে। সামাজিক মাধ্যমে বৈভবের এই ইনিংস নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে। একটি পোস্টে বলা হয়, “১৪ বছর বয়সে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি, ৭টি চার, ১১টি ছক্কা! বৈভব সূর্যবংশী একটি প্রকৃত প্রতিভা!”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বৈভব সূর্যবংশী কেবল একজন তরুণ ক্রিকেটার নন, তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। তার এই পারফরম্যান্স প্রমাণ করে যে বয়স কেবল একটি সংখ্যা। রাজস্থান রয়্যালস তরুণ প্রতিভাদের লালন করার জন্য পরিচিত, এবং বৈভব তাদের সেই ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। তার বাবা সঞ্জীব বলেছেন, “রাজস্থান রয়্যালস সবসময় তরুণদের সুযোগ দেয়। আমি আশা করি বৈভবও তাদের পথ অনুসরণ করবে।”

বৈভবের এই ইনিংস ক্রিকেট বিশ্বে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তার নির্ভীক ব্যাটিং, পরিপক্কতা এবং প্রতিভা তাকে ভারতীয় ক্রিকেটের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা আশাবাদী যে, এই তরুণ প্রতিভা ভবিষ্যতে আরও অনেক রেকর্ড ভাঙবেন এবং ভারতের জন্য গৌরব বয়ে আনবেন।