রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই বিশ্বে পারমাণবিক যুদ্ধের (Nuclear war) আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেছিলেন যে পরমাণু অস্ত্রের প্রথম চালান বেলারুশে পৌঁছেছে। এটাও ভীতিকর কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। রাশিয়ার এই পারমাণবিক অস্ত্রগুলি ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে বেলারুশে মোতায়েন করা হয়েছে, এখান থেকে লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ডের মতো ন্যাটো দেশগুলিও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
১৯৪৫ সালে আমেরিকা হিরোশিমায় বোমা ফেলেছিল তখন পর্যন্ত পৃথিবীতে একটি মাত্র পারমাণবিক হামলা হয়েছে। এই আক্রমণটি এতটাই বিধ্বংসী ছিল যে কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ নিহত হয়। এই পুরো হামলায় নিহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১.৪০ লাখ। যদি আজকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, যদি পারমাণবিক হামলা চালানো হয় তাহলে কী হবে? বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এবারের আক্রমণ আগের থেকে আরও দ্রুত এবং ধ্বংসাত্মক হবে, যাতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই লাখ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। এই আক্রমণটি একটি পারমাণবিক শীতও আনবে, যা ভবিষ্যত প্রজন্মকেও প্রভাবিত করবে।
নিউক্লিয়ার উইন্টার থিওরি কী?
বিজ্ঞানী পল ক্রুটজেন এবং জন বার্কস হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত এনভায়রনমেন্ট আফটার নিউক্লিয়ার ওয়ার বইয়ে বিজ্ঞানীরা লিখেছিলেন যে, যদি কখনো পারমাণবিক যুদ্ধ হয় তাহলে তা এতটাই ধোঁয়া তৈরি করবে যে পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসা বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে এবং জীবনচক্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই তত্ত্বকে নিউক্লিয়ার উইন্টার থিওরি বলা হয়।
পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত হলে কী হবে?
বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক শীতকালীন তত্ত্ব নিশ্চিত করার জন্য একটি মডেলও উপস্থাপন করেছেন। বলা হয়েছিল, পারমাণবিক যুদ্ধের পর যদি তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়, তাহলে গাছ-গাছালি শুকিয়ে যেতে শুরু করবে কারণ তারা সূর্যের আলো পাবে না। কৃষিকাজে বাধা আসবে। শস্য উৎপন্ন হবে না, ক্ষেত শুকিয়ে যাবে এবং পৃথিবী অনাহারের দিকে যাবে।
পৃথিবীর পুরো সিস্টেমই নষ্ট হয়ে যাবে
আজকের সময়ে পরমাণু যুদ্ধ হলে আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হবে। এটি পারমাণবিক শীত আনবে। সমুদ্রের তাপমাত্রা কমবে। ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস অর্থাৎ আইসিএএন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। পৃথিবীর সমগ্র ব্যবস্থার অবনতি ঘটবে। যদি আইসিএএনকে বিশ্বাস করা হয় তবে হিরোশিমায় ফেলা বোমাটির মতো বড় বোমা। সেই সাইজের ১০০টি বোমা সারা পৃথিবীতে ফেললে পৃথিবীর পুরো সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যাবে। আইসিএএন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, পরমাণু যুদ্ধ হলে পৃথিবীর ১০ শতাংশ জায়গায় সূর্যের আলো পৌঁছাবে না।
পরমাণু বিশ্বযুদ্ধ হলে কী হবে?
সম্প্রতি আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা একটি ভিজ্যুয়াল মডেল প্রকাশ করেছেন। এতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের একটি কাল্পনিক পারমাণবিক যুদ্ধ চিত্রিত করা হয়েছে। এটি দেখিয়েছিল যে কীভাবে এই যুদ্ধ আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হয়েছিল। এতে করা জল্পনা এতটাই ধ্বংসাত্মক ছিল যে এটির কথা ভাবতেই আত্মা কেঁপে ওঠে। এই মডেল অনুসারে, আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে যদি পরমাণু যুদ্ধ হয়, তবে কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রায় ৩১ লাখ মানুষ মারা যাবে। অন্য দেশগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করলে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৯ কোটি।