নয়াদিল্লি: ভারতের গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে (আইএসএস) ১৪ দিনের মিশনে অংশ নিতে । তিনি এই মিশনের পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই মিশনটি অ্যাক্সিয়ম-৪ নামে পরিচিত৷ এই মিশনটিতে অনুমোদন দিয়েছে নাসা৷ শুভাংশু শুক্লা ভারতের প্রথম নভোচর হিসেবে স্পেস স্টেশনে যাত্রা করবেন।
এই মিশনটি পরিচালনা করবেন পেগি হুইটসন, যিনি নাসার প্রাক্তন নভোচর এবং অ্যাক্সিয়ম স্পেসের মানব মহাকাশ অভিযানের পরিচালক। হুইটসন অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের কমান্ডার হিসেবে কাজ করবেন, এবং শুক্লা তার পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। শুক্লার সঙ্গে মিশনে অংশ নেবেন ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) নভোচর স্লাওসজ উজনানস্কি-উইস্নিউস্কি (পোল্যান্ড) এবং টিবোর কাপু (হাঙ্গেরি)।
প্রাইভেট নভোচর মিশনগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
নাসার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডানা উইগেল বলেছেন, “নাসা কম উচ্চতায় পৃথিবীর কক্ষপথে নতুন যুগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাইভেট নভোচর মিশনগুলি সেই পথ তৈরি করতে সাহায্য করছে। এই মিশনগুলি মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে প্রবেশের সুযোগ বাড়াচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের প্রতি আগ্রহ ও প্রতিশ্রুতি দেখে আনন্দিত।”
এ মিশনে নভোচারীরা স্পেসএক্স ড্রাগন স্পেসক্র্যাফটের মাধ্যমে মহাকাশে পাড়ি জমাবেন এবং আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছানোর পর সেখানে ১৪ দিন কাটাবেন। এই মিশনের অংশ হিসেবে শুভাংশু শুক্লা ভারতের প্রথম নভোচর হিসেবে স্পেস স্টেশনে যাচ্ছেন। শুক্লা ভারতের বিমানবাহিনীর সদস্যও। তিনি গগনযান মিশনেরও একজন নির্বাচিত নভোচর।
অ্যাক্সিয়ম মিশন ১ ও ২: ইতিহাসের অংশ
অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনটি অ্যাক্সিয়ম মিশন ১ ও ২ এর পরবর্তী। অ্যাক্সিয়ম মিশন ১ প্রথম প্রাইভেট নভোচারী মিশন ছিল, যা ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে ১৭ দিনের জন্য উৎক্ষেপিত হয়েছিল। পরবর্তীতে, ২০২৩ সালের মে মাসে অ্যাক্সিয়ম মিশন ২ উৎক্ষেপিত হয়, যা একইভাবে পেগি হুইটসন পরিচালনা করেছিলেন এবং সেখানে চারজন প্রাইভেট নভোচর অংশ নেন।
ভারত-আমেরিকা মহাকাশ সহযোগিতা
অ্যাক্স-৪ মিশনটি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা। গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এই মিশনের ঘোষণা করা হয়। এটি ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা করবে।
প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি
শুক্লা এবং তাঁর ব্যাকআপ, গ্রুপ ক্যাপ্টেন প্রাশান্ত নায়ার, মিশনের জন্য ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তাঁরা নাসা, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) এবং জাপান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (জেএক্সএ)-সহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷
এই মিশনটি শুধু বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যই নয়, বরং মানবিক মেধা, দলগত কাজ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক চমৎকার উদাহরণ হয়ে উঠবে। মহাকাশ অভিযানে ভারতীয় নভোচর শুক্লার যাত্রা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করছে, যা ভারত ও আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণায় নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।