নয়াদিল্লি, ২২ অক্টোবর: ভারত মহাসাগরের (Indian Ocean) তলদেশে অবস্থিত একটি অদ্ভুত স্থান যার নাম ইন্ডিয়ান ওশান জিওমরফিক লো (IOGL)। এটি ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে আসছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মাধ্যাকর্ষণ গর্ত (Massive Hole), যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে প্রায় ৩৩০ ফুট নিচে। এখন, নতুন গবেষণা পরামর্শ দিচ্ছে যে পৃথিবীর অভ্যন্তরের গভীরে ঘটে যাওয়া কিছু এর জন্য দায়ী হতে পারে। বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার সিমুলেশন এবং পৃথিবীর অভ্যন্তর সম্পর্কে তাদের বোধগম্যতা ব্যবহার করে সমুদ্রে কী ঘটছে এবং কেন তা তদন্ত করছেন। (Massive Hole in Indian Ocean)
জিওয়েড কী?
ভারতের দক্ষিণে ভারত মহাসাগরে, জিওয়েড নামে একটি অদ্ভুত জায়গা আছে। এটি এক ধরণের মানচিত্র যা যেকোনো স্থানে মহাকর্ষ বল দেখায়। সাধারণত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এই মানচিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত, কিন্তু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের তারতম্যের কারণে, কিছু এলাকা, যেমন IOGL, সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে রয়েছে।
এই জায়গাটা নিয়ে এত অবাক করার কী আছে?
এই জায়গাটা নিয়ে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো সমুদ্রের তলদেশ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক দেখায়। এখানে কোন বড় গর্ত বা আগ্নেয়গিরি নেই। এর ফলে প্রশ্ন জাগে: যদি উপরে কোনও গর্ত বা আগ্নেয়গিরি না থাকে, তাহলে মাধ্যাকর্ষণের এত অভাব কেন? উত্তর খুঁজে পেতে, বিজ্ঞানীদের উভয় দিকই সাবধানে পরীক্ষা করতে হয়েছিল।
এই রহস্যের সমাধান কি হয়েছিল?
২০২৩ সালে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc) এর বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে এই রহস্যের সমাধান করেছিলেন। তারা কম্পিউটার ব্যবহার করে ১৪ কোটি বছর ধরে পৃথিবীর আবরণের গতিবিধি অনুকরণ করেছিলেন। এর ফলে তারা মাধ্যাকর্ষণ হ্রাসের একটি নতুন কারণ আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক তাদের মডেল কী দেখিয়েছে।
মডেলটি কী দেখিয়েছে?
বিজ্ঞানীদের কম্পিউটার মডেলগুলি প্রকাশ করেছে যে প্রাচীন মহাসাগরীয় প্লেটের টুকরোগুলি ম্যান্টলের গভীরে ডুবে ছিল। তারপর, নিচ থেকে উত্তপ্ত, হালকা পদার্থের একটি বেলুন উপরের দিকে উঠে গেল। এই দুটি জিনিস একসাথে ভূপৃষ্ঠে আমরা যে মাধ্যাকর্ষণ সংকেত দেখতে পাই তা তৈরি করেছিল। এই গবেষণার মূল আবিষ্কার হল যে নিম্ন আবরণ থেকে উত্থিত গরম প্লাম মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উপর একটি উচ্ছল বল প্রয়োগ করে, যার কারণে জিওয়েডটি এত উল্লেখযোগ্যভাবে বিকৃত হয়।
মাধ্যাকর্ষণ কেন হ্রাস পায়?
আফ্রিকান প্লেটের নীচে একটি বিশাল এলাকা রয়েছে যা ভারত মহাসাগরে বিস্তৃত। একে বলা হয় লার্জ লো-শিয়ার-ভেলোসিটি প্রভিন্স (LLSVP)। এই এলাকাটি কম ঘন এবং খুব উত্তপ্ত, যা ম্যান্টলে একটি বিশাল উষ্ণ অঞ্চল হিসেবে কাজ করে। টেথিস মহাসাগরের ঠান্ডা, ভারী সামুদ্রিক প্লেটটি ডুবতে শুরু করার সাথে সাথে এটি আফ্রিকার নীচে LLSVP-এর উত্তপ্ত, উত্থিত উপাদানের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
এই চাপের কারণে কী ঘটেছিল?
এই নিম্নগামী চাপের ফলে গরম পদার্থ এবং বেলুনটি উপরে উঠেছিল। এই প্লামটি ভারত মহাসাগরের দিকে উঠেছিল, যা ম্যান্টলের মধ্যে থাকা পদার্থের ওজন এবং বন্টনকে পরিবর্তন করে এবং মাধ্যাকর্ষণকে প্রভাবিত করে। এই প্লামটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে সরে যায়, অবশেষে জিওয়েড লো তৈরি করে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি দেখায় যে পৃথিবীর অভ্যন্তরের গভীরে চলাচল কীভাবে গ্রহের মহাকর্ষ ক্ষেত্রের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণাটি জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারসে প্রকাশিত হয়েছে।