পৃথিবীর বৃহত্তম টেলিস্কোপ তৈরিতে বাধা আলোর দূষণ

এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ হল পৃথিবীর বৃহত্তম অপটিকাল ও ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ, যা বর্তমানে চিলির আতাকামা মরুভূমিতে নির্মিত হচ্ছে। তবে আলো দূষণ (Light pollution) তার পর্যবেক্ষণের ক্ষমতায়…

Light Pollution Threatens Earth's Largest Telescope

এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ হল পৃথিবীর বৃহত্তম অপটিকাল ও ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ, যা বর্তমানে চিলির আতাকামা মরুভূমিতে নির্মিত হচ্ছে। তবে আলো দূষণ (Light pollution) তার পর্যবেক্ষণের ক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

কী এই আলো দূষণ? টেলিস্কোপের আলো দূষণ বলতে বোঝায় এমন পরিস্থিতি যেখানে কৃত্রিম বা প্রাকৃতিক আলোর অতিরিক্ত উপস্থিতি আকাশ পর্যবেক্ষণে বাধা সৃষ্টি করে। এটি বিশেষত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বড় সমস্যা, কারণ এটি দূরবর্তী গ্রহ নক্ষত্র, গ্যালাক্সি বা নেবুলার স্পষ্ট পর্যবেক্ষণকে ব্যাহত করে। আলো দূষণের ফলে আকাশের প্রকৃত অন্ধকার হারিয়ে যায় এবং অনেক দুর্বল বা ক্ষীণ জ্যোতিষ্ক দৃশ্যমান হয় না।

   

আলো দূষণের কারণ:
শহুরে আলো: বড় শহরের রাস্তায়, বাড়িঘরে, ও বাণিজ্যিক স্থানে ব্যবহৃত অত্যাধিক কৃত্রিম আলো।
বাতাসে ধূলিকণা বা কুয়াশা: বাতাসে ধূলিকণা বা কুয়াশা কৃত্রিম আলো প্রতিফলিত করে, আকাশে উজ্জ্বল আলোর আভা তৈরি করে।
অপ্রয়োজনীয় আলোর ব্যবহার: সরাসরি আকাশে তাক করা আলো বা অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা।

আলো দূষণ কীভাবে টেলিস্কোপে প্রভাব ফেলে?
স্কাইগ্লো: শহরের আলো আকাশে প্রতিফলিত হয়, যা রাতের আকাশকে উজ্জ্বল করে তোলে ফলে বহু নক্ষত্র বা গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়।
পড়ে আসা আলো: কাছাকাছি লোকালয়ের কৃত্রিম আলো টেলিস্কোপের ডিটেক্টরে পড়ে ভুল তথ্য সৃষ্টি করে।

স্পেকট্রাল কন্টামিনেশন: কৃত্রিম আলোর কারণে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সংকেত দুর্বল হয়ে যায়, যা জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ডেটার গুণমান হ্রাস করে।
এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ কেন আলো দূষণে সংবেদনশীল

ELT এর মতো বড় টেলিস্কোপ খুবই সংবেদনশীল যন্ত্র। এটি মহাবিশ্বের প্রথম গ্যালাক্সি, এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল এবং মহাজাগতিক রহস্য উদঘাটনে ব্যবহৃত হবে।
এত সংবেদনশীল হওয়ার কারণে, ক্ষুদ্রতম আলো দূষণও সঠিক ডেটা সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। টেলিস্কোপটি এমন সংকেত সংগ্রহ করে যা অত্যন্ত দূরবর্তী এবং প্রায়শই দুর্বল।

ELT এর জন্য আতাকামা মরুভূমি কেন বেছে নেওয়া হয়েছে?
আতাকামা মরুভূমি হলো বিশ্বের অন্যতম শুষ্ক এবং দূষণমুক্ত স্থান। এখানে মানব বসতি খুবই কম, তাই আলো দূষণের মাত্রাও কম।
এখানকার উচ্চতা (প্রায় ৩,০০০ মিটার) এবং শুষ্ক আবহাওয়া ইনফ্রারেড পর্যবেক্ষণের জন্য আদর্শ।
আলো দূষণ রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অন্ধকার আকাশ সংরক্ষণ : চিলির সরকার আলো দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগ করছে। কাছাকাছি শহরগুলিতে আলো ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

ফিল্টার ব্যবহার: ELT-এর ডিটেক্টরে এমন ফিল্টার থাকবে, যা কৃত্রিম আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিহত করবে।
আধুনিক অপটিক্স প্রযুক্তি: এই টেলিস্কোপটি অ্যাডাপটিভ অপটিক্স ব্যবহার করবে, যা বায়ুমণ্ডলীয় ব্যাঘাত এবং আলো দূষণ থেকে প্রাপ্ত ত্রুটি সংশোধন করতে সাহায্য করবে।

আলো দূষণের কারণে ELT এর ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নগরায়নের কারণে আলো দূষণ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে বড় টেলিস্কোপগুলির জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে, ELT তার ব্যতিক্রম নয়।

আবার ওই অঞ্চলে যদি কোন নতুন প্রকল্প তৈরি হয়, যেমন এই অঞ্চলে পুনঃনবীকরণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প (সোলার প্যানেল বা উইন্ড টারবাইন) তৈরির উদ্যোগ নিলে, তা থেকে নির্গত আলোর কারণে আলো দূষণ হতে পারে। কারণ এই আলো রাতের আকাশকে অনেক উজ্জ্বল করে দেবে, যার ফলে টেলিস্কোপ মহাকাশের ক্ষীণ আলো ধরতে অসুবিধায় পড়বে।

তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব প্রকল্প পরিকল্পিতভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে টেলিস্কোপের কাজ কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়।