Anglerfish: সারা জীবন উল্টো সাঁতার কাটে আ্যংলারফিশ

ভয়ঙ্কর চেহারার কারণেই বিশ্বব্যপি পরিচিতি পেয়েছে মাছটি। জানা যায় সমুদ্রের অন্ধকার গভীরতায় বাস করে এই মাছ। বলা হচ্ছে বিস্ময়কর সামুদ্রিক মাছ অ্যাংলারফিশ-এর কথা। পৃথিবীতে অ্যাংলারফিশের…

Weirdest Deep sea Anglerfish

ভয়ঙ্কর চেহারার কারণেই বিশ্বব্যপি পরিচিতি পেয়েছে মাছটি। জানা যায় সমুদ্রের অন্ধকার গভীরতায় বাস করে এই মাছ। বলা হচ্ছে বিস্ময়কর সামুদ্রিক মাছ অ্যাংলারফিশ-এর কথা। পৃথিবীতে অ্যাংলারফিশের প্রায় ২ শতাধিক প্রজাতি রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ প্রজাতির বসবাস গভীর সমুদ্রে। গভীর সমুদ্রে থাকায় এদের সম্পর্কে খুব বেশি গবেষণা করাও সম্ভব হয়না।

অ্যাংলারফিশের মাথা অনেক বড় এবং মুখ অর্ধাচন্দ্রাকার। এদের অর্ধাচন্দ্রাকার মুখে সূচালো দাঁত থাকে। মাথার উপরে এক ধরণের লম্বা কাঁটা থাকে যার শেষ প্রান্ত থেকে আলো উৎপন্ন হয়। উপাঙ্গটি তাদের মুখের উপরের অংশ থেকে খানিকটা সামনের দিকের অংশে ঝুলে থাকে। মূলত সাগরের গভীরে ভীষণ অন্ধকার, তাই অন্ধকারে চলাফেরা ও শিকার ধরার কাজেই এই আলো ব্যবহার করে তারা। সাধারণত পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী মাছ অনেক বড় হয়।

   

অ্যাংলারফিশ-এর প্রজনন ক্রিয়ায়ও অন্য সামুদ্রিক মাছের তুলনায় বেশ অদ্ভুত। একটি পুরুষ মাছ জীবনে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে পরিপাকতন্ত্রের জটিলতায় ভোগে। যার ফলে সে খাদ্য গ্রহণ করতে পারেনা। তখন সমস্যা সমাধানের জন্য ঘ্রাণের মাধ্যমে সে স্ত্রী মাছের কাছে যায় এবং দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে স্ত্রী মাছের গায়ে আটকে থাকে। এই সময় তারা মুখ থেকে এক ধরণের এঞ্জাইম নিঃসরণ করে, যে এঞ্জাইমের প্রভাবেই স্ত্রী মাছটির কামড়ের স্থান গলে যায়। গলে যাওয়ার কারণে স্ত্রী মাছের রক্তনালীর সঙ্গেই পুরুষ মাছের দৈহিক সংযোগ ঘটে। তখন পুরুষ মাছটি স্ত্রী মাছটির থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে। পরবর্তীতে স্ত্রী মাছটি তার মৃত্যু পর্যন্ত তার গায়ের সাথেই লেগে থেকে খাবার গ্রহণ করে পুরুষ মাছটি। এবং একটা সময় প্রজননের জন্য শুক্রানুও সরবরাহ করতে সক্ষম হয়।

তবে সম্প্রতি গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা অ্যাংলার ফিশের এমন এক অদ্ভুত প্রজাতির সন্ধান পান যাদের একটি অনন্য বৈশিষ্ট রয়েছে। এই প্রজাতিটি উল্টোভাবে সাঁতার কেটেই তাদের সারাজীবন পার করে দেয়। সমুদ্র বিজ্ঞানী এবং সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের একটি সহযোগী দল বিশেষ রিমোটলি অপারেটেড ভেহিক্যাল বা ROV- র সাহায্যে তাদের গবেষণার কাজ করতেন। বিশেষ এই যানটিতে করে তার অ্যাটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের তলদেশের বিভিন্ন অংশে ঘুরে বেড়ান এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের ফুটেজ সংগ্রহ করেন। সেসব ফুটেজেই ১৯৯৯ অ্যাংলারফিশের প্রজাতিটির এই অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করেন তারা। জানা গেছে সমুদ্রের প্রায় ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার ফুট গভীরতায় এদের বসবাস। পরবর্তী কয়েক বছর তারা অ্যাংলারফিশের প্রজাতিটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন এবং উল্টো সাঁতারের ৮ টি ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।

গবেষণার শেষে তারা প্রায় নিশ্চিত হন কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কিংবা সময়ই নয়, মাছগুলো অবিরাম উল্টোভাবেই সাঁতার কাটে। উল্টোভাবে থাকলে তাদের আলো উৎপাদানকারী উপাঙ্গটি সমুদ্রের নীচের দিকে ঝুলে থাকে যা হয়ত মাছটিকে সমুদ্রের তলদেশে গাছপালার ভিতরে লুকিয়ে থাকা শিকার খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এই কারণেই মাছটি সারা জীবন উল্টো সাঁতার কাটে বলে মনে করছেন গবেষকরা।