বৃহস্পতি গ্রহ (Jupiter), সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এই গ্রহ পৃথিবীকে রক্ষা করছে। এর কারণ এর বিশাল ভর এবং শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র। বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষণ এমন এক শক্তি সৃষ্টি করে যা সৌরজগতের অভ্যন্তরে এবং বাইরের অংশে থাকা বিপুল সংখ্যক ধূমকেতু, গ্রহাণু এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু গুলোর গতিপথ পরিবর্তন করে। এই মহাজাগতিক বস্তুর অনেকেই পৃথিবীর দিকে ধাবিত হতে পারত এবং তা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করতে পারত।
ধারণা করা হয়, সৌরজগতের ইতিহাসে এমন অনেক সময় এসেছে যখন বৃহস্পতি গ্রহ তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দিয়ে পৃথিবীর দিকে ধাবিত ধূমকেতু বা গ্রহাণুকে ভিন্ন পথে সরিয়ে দিয়েছে বা বৃহস্পতি নিজেই শোষণ করেছে। উদাহরণ হিসেবে ১৯৯৪ সালে দেখা যায়, ধূমকেতু শুমেকার-লেভি ৯ বৃহস্পতির উপর আঘাত হানে। এই ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, বৃহস্পতি একদিকে যেমন মহাজাগতিক বস্তুকে পৃথিবীর দিকে ধাবিত হওয়া থেকে বিরত রাখে, অন্যদিকে নিজের শরীরে সেই আঘাত গ্রহণ করার ক্ষমতাও রাখে।
যদি বৃহস্পতি না থাকত, তবে এই ধূমকেতুটি হয়তো পৃথিবীর দিকে ধাবিত হতে পারত এবং তা মানুষের জীবনে এক বিশাল বিপর্যয় সৃষ্টি করত। বৃহস্পতির অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। এটি সৌরজগতের মধ্যবর্তী একটি এলাকায় অবস্থিত, যেখান থেকে এটি সৌরজগতের বাইরের অংশ থেকে আসা ধূমকেতু এবং গ্রহাণুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এটি মূলত সৌরজগতের “ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারক” হিসেবে কাজ করে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বৃহস্পতির উপস্থিতি পৃথিবীর জীবনের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যদি বৃহস্পতি না থাকত, তবে পৃথিবীতে আরও অনেক গ্রহাণু আঘাত করত, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারত এবং প্রাণীজগৎকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিত। এছাড়া বৃহস্পতির কারণে সৌরজগতে একটি নির্দিষ্ট স্থিতিশীলতা এসেছে, যা পৃথিবীর মতো একটি বাসযোগ্য গ্রহের বিকাশের জন্য সহায়ক হয়েছে। অতএব, বৃহস্পতি গ্রহ এক অর্থে পৃথিবীর রক্ষাকর্তা। এর বিশাল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং অবস্থান পৃথিবীকে মহাজাগতিক বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার একটি প্রধান কারণ। এটি না থাকলে পৃথিবী আজকের মতো একটি জীবনসমৃদ্ধ গ্রহে পরিণত হতে পারত না।
পৃথিবীর ইতিহাসে মহাজাগতিক বস্তুর আঘাত অনেকবার ঘটেছে, যেমন ডাইনোসরদের বিলুপ্তির জন্য দায়ী সেই বিশাল গ্রহাণুর আঘাত। তবে বৃহস্পতি না থাকলে এই ধরনের ঘটনা আরও বেশি হতো। কারণ এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অনেক বিপজ্জনক মহাজাগতিক বস্তুকে পৃথিবীর দিকে আসা থেকে বাধা দেয়। এর ফলে, পৃথিবী জীবনের বিকাশ এবং টিকে থাকার জন্য একটি সুরক্ষিত পরিবেশ পেয়েছে। এই গ্রহ বড় ভাইয়ের মতো পৃথিবীকে রক্ষা করছে।