কৃত্রিম সূর্য তৈরি করল চিন

China: চিন আবারও বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করল। গবেষণা ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে দেশটি। সম্প্রতি তারা তৈরি করেছে একটি…

China artificial sun

China: চিন আবারও বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করল। গবেষণা ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে দেশটি। সম্প্রতি তারা তৈরি করেছে একটি ‘কৃত্রিম সূর্য,’ যা পৃথিবীতে ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ধরে রাখার অসাধারণ রেকর্ড স্থাপন করেছে। এই প্রযুক্তিগত কীর্তি বিজ্ঞানীদের এবং সারা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

চীনের হেফেই ইনস্টিটিউট অব ফিজিকাল সায়েন্সেসে এই ‘কৃত্রিম সূর্য’ প্রকল্পটি চালানো হয়। প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক নাম হলো ইস্ট (EAST) বা এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক। এটি একটি ফিউশন রিঅ্যাক্টর, যা সূর্যের মতো তাপ উৎপন্ন করতে সক্ষম। ফিউশন প্রযুক্তি হলো সেই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সূর্যের মতো বিশাল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়।

   

রেকর্ড স্থাপন: ১৮ মিনিট ধরে ১০ কোটি ডিগ্রি তাপ

চীনের কৃত্রিম সূর্য ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ধরে রাখার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক অর্জন করেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা এই তাপমাত্রা প্রায় ১৮ মিনিট পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এটি ফিউশন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের রেকর্ড। এর আগে, অন্যান্য দেশ ফিউশন রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে উচ্চ তাপমাত্রা সৃষ্টি করলেও এত দীর্ঘ সময় ধরে তা স্থায়ী করতে পারেনি।

কেন এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ?

সৌরশক্তি এবং পরমাণু ফিউশনের মতো শক্তি উৎপাদনের পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব এবং অক্ষয় শক্তির একটি বড় উৎস হতে পারে। ফিউশন প্রক্রিয়ায় দুটি হালকা নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি ভারী নিউক্লিয়াস তৈরি করে এবং সেই সঙ্গে প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়। এটি কার্যত পরমাণু বিভাজনের (নিউক্লিয়ার ফিশন) বিপরীত প্রক্রিয়া।

চীনের এই গবেষণা পরিবেশগত দিক থেকেও একটি বড় সাফল্য। কারণ এটি প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। পৃথিবীর উষ্ণায়ন এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ফিউশন প্রযুক্তি বাস্তবায়নে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ফিউশন রিঅ্যাকশন কার্যকরভাবে দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী করা এবং তা থেকে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তার বিষয়টিও বড় চ্যালেঞ্জ।

চীন এই কৃত্রিম সূর্য প্রকল্পে বহু বছর ধরে গবেষণা চালাচ্ছে এবং আগামি বছরগুলোতে আরও উন্নত ফিউশন রিঅ্যাক্টর তৈরির পরিকল্পনা করছে। ফিউশন শক্তি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার উপযোগী করতে তারা আরও বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া

চীনের এই সাফল্য সারা বিশ্বের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে বিস্মিত করেছে। এটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বিভিন্ন দেশ ফিউশন শক্তি উন্নয়নের জন্য প্রতিযোগিতা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও একই ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে চীন তাদের রেকর্ড ভেঙে ফিউশন প্রযুক্তিতে নিজেদের নেতৃত্বের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।

চীনের কৃত্রিম সূর্য প্রকল্প একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি কেবল প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, পরিবেশগত এবং জ্বালানি সংকট সমাধানে ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়, তবে এটি পৃথিবীর শক্তি উৎপাদনের পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটাবে। বিশ্বের জন্য এটি একটি বড় অনুপ্রেরণার উৎস এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।