বেঙ্গালুরু, ১৮ অক্টোবর ২০২৫: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)-এর চন্দ্রযান-২ মিশন চাঁদ সম্পর্কে এক নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য সামনে আনল। প্রথমবারের মতো চন্দ্রযান-২-এর যন্ত্রপাতি সূর্য থেকে আসা Coronal Mass Ejections (CME) বা করোনাল ভর নির্গমনের সরাসরি প্রভাব চাঁদের পরিবেশে লক্ষ্য করেছে।
কী এই CME বা Coronal Mass Ejection?
CME হলো সূর্যের করোনা স্তর থেকে নির্গত বিশাল আকারের প্লাজমা ও চৌম্বক ক্ষেত্র। এগুলো মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং যেখানেই আঘাত হানে, সেখানকার পরিবেশকে প্রভাবিত করে। পৃথিবীর বেলায় এই CME প্রায়ই অরোরা, স্যাটেলাইট যোগাযোগে ব্যাঘাত এবং বিদ্যুৎ গ্রিডে সমস্যা সৃষ্টি করে।
চাঁদে প্রভাব: চন্দ্রযান-২-এর পর্যবেক্ষণ
চন্দ্রযান-২-এর Chandrayaan-2 Large Area Soft X-ray Spectrometer (CLASS) এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি দেখেছে যে, CME আঘাত হানার পর চাঁদের dayside environment বা দিনের দিকের পরিবেশে মোট চাপ বেড়ে গেছে।
এই বাড়তি চাপের অর্থ হলো, CME-র কণাগুলো চাঁদের এক্সোস্ফিয়ারে প্রবেশ করে সেখানে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এটি বৈজ্ঞানিকদের জন্য বড় তথ্য, কারণ এতদিন পর্যন্ত CME-র প্রভাব মূলত পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহে পর্যবেক্ষিত হয়েছিল। এবার প্রথমবারের মতো সরাসরি চাঁদেও এর প্রমাণ মিলল।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই আবিষ্কার?
চাঁদের এক্সোস্ফিয়ার বোঝা: চাঁদের বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা, যাকে এক্সোস্ফিয়ার বলা হয়। CME-র কারণে কীভাবে এটি প্রভাবিত হয়, তা জানা ভবিষ্যতের চন্দ্র অভিযানের জন্য জরুরি।
চন্দ্র গবেষণার নতুন অধ্যায়: ISRO-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতের মানব মিশনের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে।
পৃথিবী-চাঁদ তুলনা: পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের কোনো শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র নেই, ফলে CME-র আঘাত সরাসরি অনুভূত হয়। এই তুলনামূলক গবেষণা সৌর-বায়ু ও মহাজাগতিক পরিবেশ নিয়ে নতুন ধারণা দেবে।
ISRO-র প্রতিক্রিয়া
ISRO এক বিবৃতিতে জানিয়েছে:
“চন্দ্রযান-২-এর এই পর্যবেক্ষণ চাঁদ সম্পর্কে আমাদের ধারণায় নতুন মাত্রা যোগ করল। এটি শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নয়, ভবিষ্যতের চন্দ্রভিত্তিক স্টেশন ও মহাকাশচারীদের নিরাপত্তার জন্যও বড় সহায়ক।”
India’s Chandrayaan-2 observes effects of the Coronal Mass Ejections from the Sun on the Moon. First-ever observations showed an increase in the total pressure of the dayside environment of the Moon.
For details, please visithttps://t.co/Yvc7xcxR00
— ISRO (@isro) October 18, 2025
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
NASA-র Lunar Reconnaissance Orbiter বা ESA-র মিশনগুলো চাঁদকে পর্যবেক্ষণ করেছে বটে, কিন্তু CME-র সরাসরি প্রভাব ধরতে পারেনি। সেই দিক থেকে ভারতীয় মিশনের এই সাফল্য বিশ্ব মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলেছে।
চন্দ্রযান-২ মিশনের প্রাথমিক লক্ষ্য সফল না হলেও এর অরবিটার একের পর এক নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। সূর্যের করোনাল ভর নির্গমনের প্রভাব চাঁদে ধরা পড়া ভারতের মহাকাশ গবেষণার আরেকটি বড় পদক্ষেপ। এটি শুধু দেশের গর্ব নয়, আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক মহলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।