বিজ্ঞানের রহস্য অসীম। গবেষকরা নিরন্তর রহস্য সন্ধানে মজে আছেন। তেমনই একটি গবেষণা উটের কান্নায় সাপের বিষ খতম! এমনই এক অভিনব গবেষণা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে হই হই।
প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন। সর্বত্র অ্যান্টিভেনম মেলে না। আবার সাপ নিয়ে বিস্তর কুসংস্কারের কারণে সাপে ছোবল খাওয়া রোগী চিকিৎসার অভাবে মারা যান। এই পরিস্থিতি থেকে উটের কান্না দেবে মুক্তি।
উটের চোখের জলে আছে ভয়াল বিষধর সাপের বিষ নাশক উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে, উটের চোখের জলে থাকা ন্যানোবডি প্রায় ২৬ প্রজাতির সাপের বিষকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম। এর মধ্যে অত্যন্ত বিষাক্ত ভাইপার প্রজাতির সাপ রয়েছে, যায় পৃথিবীর অন্যতম প্রাণঘাতী সাপের একটি।
গবেষকরা বলছেন, উটের ন্যানোবডিগুলো গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যবহারের উপযোগী এবং এটা ঘোড়া থেকে তৈরি অ্যান্টিভেনমের তুলনায় অনেক বেশি সুবিধাজনক।
উটের চোখের জলে কী থাকে?
সাধারণভাবে, চোখের জল (tear fluid) লুব্রিক্যান্ট হিসেবে কাজ করে। এতে থাকে জল, ল্যাক্রিমাল প্রোটিন, এনজাইম, ল্যাক্টোফেরিন, লিপিড ও অ্যান্টিবডি। তবে উটের চোখের জল একটু আলাদা। কারণ, উট মরুভূমির প্রাণী। ধুলো, উচ্চ তাপমাত্রা ও জলস্বল্পতার পরিবেশে টিকে থাকার জন্য তাদের চোখের জলে থাকে এমন কিছু প্রোটিন ও গ্লাইকোপ্রোটিন, যেগুলো অত্যন্ত প্রতিষেধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যামিনো অ্যাসিড রিচ।
গবেষণা কী বলছে?
২০১৮ সালে জর্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উটের চোখের জল থেকে সংগৃহীত নির্দিষ্ট প্রোটিনসাইট (lactoferrin) চোখের সংক্রমণ, এমনকি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিও প্রতিরোধ করতে পারে।উটের চোখের ল্যাক্রিমাল প্রোটিন মানুষের চোখের চিকিৎসায় হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা রাখে। বিশেষ করে ড্রাই আই সিনড্রোম বা চোখের জলস্বল্পতা রোগে ব্যবহার হতে পারে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে উটের চোখের জল ও সাপের বিষের নির্দিষ্ট এনজাইম ( phospholipase A2) একে অপরের মডিউলেটর হিসেবে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ, একটির প্রোটিন অপরটির বিষক্রিয়া কমাতে বা রূপান্তর করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, উটের চোখের প্রোটিন (serine protease inhibitors) সাপের বিষের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, ফলে এটি আরো ভালো অ্যান্টিভেনম তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে। উটের চোখের জল ও সাপের বিষ দুটি বিপরীতধর্মী উপাদান। জৈবপ্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে তারা হয়ে উঠছে একটি যুগান্তকারী জুটি। রোগ প্রতিরোধ, নিউরোডিজঅর্ডার চিকিৎসা, এমনকি ক্যান্সার থেরাপিতেও এদের ব্যবহার নিয়ে চলছে বিস্তৃত গবেষণা।