সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় কাঠামো (Largest Cosmic Structure) আবিষ্কার করেছেন, যার নাম “কুইপু” (Quipu)। এক বিশাল ছায়াপথের (গ্যালাক্সি) জট, যা আমাদের জানা মহাবিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় কাঠামো। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩২ কোটি আলোকবর্ষ, যা এটিকে মহাবিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কাঠামোতে পরিণত করেছে। এটি বহু গ্যালাক্সি ও গ্যাসের তৈরি ফিলামেন্ট বা জালের মতো ছড়িয়ে আছে, যেমনটা আমরা মহাবিশ্বের বৃহৎ স্কেলে দেখি।
নামকরণের কারণ কী?
“কুইপু” নামটি এসেছে প্রাচীন ইনকা সভ্যতার একটি গাণিতিক গণনা সরঞ্জাম থেকে, যা দড়ির উপর গিঁট দিয়ে তথ্য সংরক্ষণ করত। যেহেতু এই গ্যালাক্সি ফিলামেন্টের আকৃতি ইনকা সভ্যতার কুইপুর মতো জটিল ও সংযুক্ত, তাই এটির এমন নামকরণ করা হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পরিচিত মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের কাঠামো আবিষ্কার করেছেন যার নাম কুইপু, যা প্রায় ১.৩২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত এবং এতে ২০০ প্রায় কোয়াড্রিলিয়ন সৌর ভর রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের বৃহত্তম কাঠামোগুলোর মানচিত্র তৈরি করতে কাজ করছেন, যেখানে তাঁরা বিভিন্ন আলোর তরঙ্গে মহাবিশ্বের বস্তুগুলোর বিন্যাস বিশ্লেষণ করছেন। দূরবর্তী মহাজাগতিক বস্তুগুলোর আলো লাল রঙের দিকে সরে যায়, যা “রেডশিফট” নামে পরিচিত। সাধারণত ০.৩ পর্যন্ত রেডশিফটযুক্ত বস্তুগুলোর ভালো মানচিত্র তৈরি হয়েছে, কিন্তু এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ০.৩ থেকে ০.৬ রেডশিফটযুক্ত বস্তুগুলোর ওপর নজর দিয়েছেন। রেডশিফট যত বেশি, বস্তুগুলো ততই দূরবর্তী।
গবেষণায় তাঁরা “কুইপু” নামে যে বিশাল মহাজাগতিক কাঠামো শনাক্ত করেছেন, যা এত বড় যে এটি আকাশের মানচিত্রে সহজেই দৃশ্যমান। এটি এক ধরনের “সুপারস্ট্রাকচার” বা অতিবৃহৎ মহাজাগতিক কাঠামো। তাঁরা আরও চারটি বিশাল কাঠামো পেয়েছেন—সার্পেনস-কোরোনা বোরিয়ালিস সুপারস্ট্রাকচার, হারকিউলিস সুপারস্ট্রাকচার, স্কাল্পটর-পেগাসাস সুপারস্ট্রাকচার, এবং শ্যাপলি সুপারক্লাস্টার। এর মধ্যে শ্যাপলি সুপারক্লাস্টার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় মহাজাগতিক গঠন বলে মনে করা হত, কিন্তু এখন কুইপু এবং অন্যান্য নতুন কাঠামো সেটিকে ছাড়িয়ে গেছে।
এই পাঁচটি বিশাল মহাকাশীয় কাঠামো মিলে মহাবিশ্বের ১৩% পরিমাণ স্থান জুড়ে রয়েছে। এছাড়া, এগুলোর মধ্যে মহাবিশ্বের ৪৫% গ্যালাক্সি ক্লাস্টার, ৩০% গ্যালাক্সি এবং ২৫% বস্তু বা ম্যাটার রয়েছে। অর্থাৎ, এগুলো মহাবিশ্বের গঠন ও বস্তু বণ্টনের একটি বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
এই আবিষ্কার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এতো বড় কাঠামোর অস্তিত্ব মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কে আমাদের নতুন ধারণা দেবে বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। এটি মহাবিশ্বের “কসমিক ওয়েব” বা ছায়াপথের জালের আরেকটি উদাহরণ, যা দেখায় কীভাবে মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলো ছড়িয়ে আছে। তাছাড়া এটি মহাবিশ্বের ডার্ক ম্যাটার এবং মহাকর্ষ কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কোথায় আবিষ্কৃত হয়েছে?
এটি SDSS নামক টেলিস্কোপিক অনুসন্ধান থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে, যা মহাবিশ্বের বিশাল অংশের মানচিত্র তৈরি করে। এই বিশাল কাঠামোটি এমন এক অঞ্চলে পাওয়া গেছে, যেখানে প্রচুর গ্যালাক্সি জটিল এক অসাধারণ নকশায় সংযুক্ত রয়েছে।
কুইপু মহাবিশ্বের বিশালতা এবং তার জটিল কাঠামো বোঝার নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এটি দেখায় যে, মহাবিশ্বের বৃহৎ কাঠামোগুলো বিশৃঙ্খল নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট বিন্যাসে গঠিত। ভবিষ্যতে, আরও গবেষণা আমাদের মহাবিশ্বের অজানা রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করবে।