২০২৫ সালের জুলাই মাসে চিলির অ্যাস্টেরয়েড টেরেস্ট্রিয়াল-ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম (Alien) টেলিস্কোপের মাধ্যমে আবিষ্কৃত বিশাল আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু ৩আই/অ্যাটলাস নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে তীব্র আলোচনা চলছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত জ্যোতির্পদার্থবিদ অধ্যাপক অ্যাভি লোব দাবি করেছেন যে, এই বস্তুটি কেবল একটি ধূমকেতু নয়, বরং এটি এলিয়েন সভ্যতার তৈরি একটি প্রযুক্তিগত যান হতে পারে।
তাঁর এই দাবি বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানী ও জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নাসার মতে, এটি আমাদের সৌরজগতে প্রবেশ করা তৃতীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু, যা এর অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
৩আই/অ্যাটলাস, যা প্রায় ২০ কিলোমিটার বা ম্যানহাটনের চেয়ে বড়, অস্বাভাবিক উজ্জ্বলতা এবং গতিপথের জন্য পরিচিত। অধ্যাপক লোবের মতে, এই বস্তুটির গতিপথ অত্যন্ত অস্বাভাবিক, যা শুক্র, মঙ্গল এবং বৃহস্পতির কাছ দিয়ে যাবে। তিনি বলেন, “যদি এটি একটি পরিকল্পিত গতিপথ হয়, তবে এটি একটি গুপ্তচর মিশনের জন্য হতে পারে।”
এই বস্তুটির সামনে থেকে আলো নির্গত হওয়া, যা সাধারণ ধূমকেতুর পিছনে লেজের মতো আলোর পরিবর্তে অস্বাভাবিক, তাকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। এছাড়াও, এটির গতি প্রতি ঘণ্টায় ১৩০,০০০ মাইলেরও বেশি, যা এটিকে আমাদের সৌরজগতে সবচেয়ে দ্রুতগামী বস্তু করে তুলেছে।
লোব এবং তাঁর সহযোগী অ্যাডাম হিবার্ড ও অ্যাডাম ক্রাউল, যারা ইউ.কে.-ভিত্তিক ইনিশিয়েটিভ ফর ইন্টারস্টেলার স্টাডিজের সঙ্গে যুক্ত, একটি গবেষণাপত্রে দাবি করেছেন যে, ৩আই/অ্যাটলাসের গতিপথ পৃথিবীর কক্ষপথের সমতলে ৫ ডিগ্রির মধ্যে রয়েছে, যার সম্ভাবনা মাত্র ০.২ শতাংশ।
এই গতিপথ এবং এর আকার এটিকে আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্রহাণুর চেয়ে অস্বাভাবিক করে তুলেছে। তারা এই বস্তুটিকে ‘ডার্ক ফরেস্ট হাইপোথিসিস’-এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন, যা বলে যে, এলিয়েন সভ্যতা নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারে সম্ভাব্য শত্রু বা শিকার থেকে বাঁচতে।
যদিও নাসা এই বস্তুটিকে ধূমকেতু হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে, লোবের দাবি এটির গ্যাস বা ধূলিকণার কোমা এবং লেজের অভাবের উপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, “এটি একটি প্রাকৃতিক বস্তুর মতো আচরণ করছে না।” তবে, অন্যান্য বিজ্ঞানীরা, যেমন ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির রিচার্ড ময়েসল, এই দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন যে, সমস্ত পর্যবেক্ষণ এটিকে একটি প্রাকৃতিক ধূমকেতু হিসেবে নির্দেশ করে।
৩আই/অ্যাটলাস ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি (প্রায় ১৩০ মিলিয়ন মাইল) পৌঁছাবে এবং ১৯ ডিসেম্বর পৃথিবী থেকে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মাইল দূরে থাকবে। লোবের মতে, এই সময়ে এটি পৃথিবীর বিপরীত দিকে সূর্যের কাছে থাকায় পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হবে, যা এটির গতিপথ পরিবর্তনের জন্য একটি ‘আদর্শ সময়’ হতে পারে। তিনি নাসার কাছে এই বস্তুটির দিকে মহাকাশযান পুনঃনির্দেশনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এই বস্তুটির আবিষ্কার ২০১৭ সালে ‘ওউমুয়ামুয়া’ এবং ২০১৯ সালে বোরিসভ ধূমকেতুর পর তৃতীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। লোব পূর্বেও ‘ওউমুয়ামুয়া’কে এলিয়েন প্রোব বলে দাবি করেছিলেন, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। তাঁর গবেষণা গ্যালিলিও প্রজেক্টের অংশ, যা এলিয়েন প্রযুক্তির সন্ধানে নিবেদিত।
সেপ্টেম্বরের শুরুতেই কার্যকর পাঁচটি নতুন নিয়ম, জানুন বিস্তারিত
সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে এক্স-এ, এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কেউ কেউ লোবের তত্ত্বকে সমর্থন করলেও, অনেকে এটিকে কল্পবিজ্ঞানের গল্প বলে সমালোচনা করেছেন। তবে, লোব জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের উচিত সমস্ত সম্ভাবনা বিবেচনা করা এবং ডেটার মাধ্যমে এর সত্যতা যাচাই করা।” এই ঘটনা মানবজাতির জন্য মহাকাশে নতুন সম্ভাবনা এবং প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, যা বিজ্ঞানীদের আরও গবেষণার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।