তিমিরকান্তি পতি: জেলার ইতিহাসে মল্ল রাজাদের জৌলুস এমনই ছিল যে বাঁকুড়ার একটি ডাক নাম মল্লভূম। এই মল্লভূমের জৌলুস এখন ইতিহাস। তবে বাঁকুড়ার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঝলমলে দিকটা মল্লভূম গরিমা ঘেরা। মল্লভূমের দুর্গা (Durga Puja) আরাধনায় আরও অনেক চমক মিশে আছে।
সে সময়ের কথা। দেশ তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন মধ্যগগণে। শাসকদের অতিরিক্ত করের বোঝা টানতে না পেরে মল্ল রাজাদের একের পর এক তালুক তখন নিলামে উঠছে। এই সময়ই বিষ্ণুপুরের শেষ মল্ল রাজা চৈতন্য সিংহের দেওয়ান ছিলেন চণ্ডীচরণ মুখোপাধ্যায়। তাঁর সময়েই ময়নাপুর তালুকের জমিদারী লাভ করে মুখোপাধ্যায় পরিবার।
জমিদারী লাভের পর ইংরেজী ১৭৯১ সাল নাগাদ দুর্গাপুজার সূচনা হয়। তার অনেক পরে ১৮৪৭ সাল নাগাদ তৈরী হয় স্থায়ী মন্দির। সেই হিসেবে এবছর ২৩১ বছরে পড়লো ময়নাপুর মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমিদারির জেল্লা এখন অনেকটাই ফিকে। তবে ভাঙাচোরা, পলেস্তারা খসা জমিদার বাড়িতে এখনো শরতের রোদ ঝলকায়। কারণ ‘ঘরের মেয়ে’ উমা আসবে ঘরে…। তাই জমিদারির রং না থাকলেও মুখোপাধ্যায়দের ঠাকুরদালানে পুজোর রং লাগে নিয়ম মেনেই।
আগে যেখানে ঝাড়বাতির আলোর ছটায় বসত যাত্রাপালা। রামায়ণ গান আর পুতুলনাচে গমগম করত চণ্ডীমণ্ডপ। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে সব অতিত। তার জায়গা নিয়েছে রঙবাহারি বৈদ্যুতিক আলো। মূলতঃ লোক বলের অভাবে ন’দিনের পুজো কমে হয়েছে পাঁচ দিনে, বন্ধ হয়েছে ছাগবলি। কিন্তু সময়ের দাবি মেনে এ সব পরিবর্তন মেনে নিলেও নিষ্ঠা আর ভক্তিতে কোন ছেদ পড়তে দেননি মুখোপাধ্যায় বাড়ির বর্তমান বংশধরেরা।