Durga Puja: দুর্গার সঙ্গে পুজিতা হন আরও তিন দেবী

একই বাড়িতে মা দুর্গার (Durga Puja) সঙ্গে আরও তিনটি পুজো হচ্ছে সপ্তমী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত! এরকম আগে কখনও শুনেছেন? অথচ বাংলারই এক গ্রামে এই…

unique durga puja of howrah village

short-samachar

একই বাড়িতে মা দুর্গার (Durga Puja) সঙ্গে আরও তিনটি পুজো হচ্ছে সপ্তমী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত! এরকম আগে কখনও শুনেছেন? অথচ বাংলারই এক গ্রামে এই প্রথা গত প্রায় চার শতাব্দী ধরে চলে আসছে। কলকাতার পার্শ্ববর্তী হাওড়া জেলার বাগনান থানার অন্তর্গত বর্ধিষ্ণু গ্রাম কল্যাণপুর। আর সেখানেই বিখ্যাত রায়বাড়ির দুর্গাপুজো। খাতায় কলমে ৩৫০ বছরের পুরনো পুজো। প্রত্যেকটি পুজোর জন্য প্রতিষ্ঠিত মন্দির আছে। দুর্গামন্দিরে পূজিত হন মা দুর্গা। তার সঙ্গেই পুজোর চারদিন শীতলা এবং মনসা পুজো হয়। আর একটি পুজো হল ষষ্ঠীপুজো। প্রত্যেক পুজো হয় একেবারে আলাদা আলাদা আনুষাঙ্গিক মতে এবং একই সময়ে।

   

বর্ধমানের একজন রাজা ছিলেন। তাঁর নায়েব বা হিসাবরক্ষক নৃসিংহরাম রায় ছিলেন তখনকার কল্যাণপুরের জমিদার। নৃসিংহরাম রায়-ই এই পুজো শুরু করেন। তাঁর নামেই পুজো কমিটির নাম নৃসিংহরাম রায় দেবোত্তর স্টেট। এখানের প্রতিমার মূর্তি হল জগন্নাথ ঘরানার বৈষ্ণব মূর্তি। আমরা জানি যে, অনেক জায়গায় রথের দিন মায়ের খুঁটি পুজো হয়। কিন্তু বাগনানের রায়বাড়ির প্রথা ভিন্ন। এখানে জন্মাষ্টমীর দিন ৩ কোদাল মাটি তোলা হয়। সেই মাটি পুজো করে তৈরি হয় মা দুর্গা, লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর মুখ।

এখানে বংশপরম্পরায় মায়ের মূর্তি তৈরি হয়ে এসেছে। বর্তমানে মূর্তি তৈরি করার কাজ করেন পঞ্চাননবাবু। আগে তাঁর বাবা গোকুলবাবু মূর্তি গড়তেন। তার আগে তাঁর বাবা-ঠাকুরদারা মূর্তি গড়েছেন। পঞ্চাননবাবুর পর রীতি অনুযায়ী তাঁর ছেলে মূর্তি গড়বেন। প্রথা অনুযায়ী শুধু গামছা পরেই এঁরা প্রতিমা নির্মাণ করেন। এখন পঞ্চাননবাবুর তদারকিতে প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে। প্রতি বছর প্রতিমার উচ্চতা, ওজন এবং অন্য সমস্তকিছুই হুবহু এক থাকে। প্রধান কাঠামোরও কোনও পরিবর্তন হয় না। ঢাকিরাও এখানে বংশপরম্পরায় আছেন। বর্তমানে প্রধান ঢাকি হলেন শ্রীকান্ত রুইদাস। তার আগে তাঁর দাদা মন্টু রুইদাস ঢাক বাজাতে আসতো।

বৈষ্ণবমতে মূর্তি হলেও শাক্ত মত অনুযায়ী রায়বাড়ির পুজোয় বলি প্রথা চালু আছে। বলা হয়, তমলুকের বর্গভীমা পুজোর মোষ বলির প্রথা থেকেই এখানে বলি হয়। বলির ক্ষেত্রে আর একটা নিয়ম রয়েছে। বলিতে বাধা পড়লে বা বলি সম্পূর্ণ না হলে নিয়ম অনুযায়ী পরের বছর বলি হবে না। যদিও এখনও অবধি বলিতে কখনও বাধা পড়েনি। নবমীর দিন ভোগ খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়। প্রায় হাজারখানেক মানুষ এই ভোগ গ্রহণ করতে আসেন। পুজো কমিটির তরফ থেকে মাছের ব্যবস্থাও করা হয়। এছাড়া খিচুড়িভোগও থাকে।

এই পুজোর আরও দু’টি অদ্ভুত নিয়ম আছে। প্রথমত, পুজোর জোগাড়-যন্ত্র, যেমন নৈবেদ্য ইত্যাদি সবের আয়োজন করেন বাড়ির পুরুষেরা। মহিলারা আলপনা দেওয়া এবং অন্যান্য টুকিটাকি কাজ করে থাকেন। পুজোয় খই-মুড়কি বিলি করা হয়। খই-মুড়কি বানানো এবং জোগান দেওয়ার কাজ করেন মহিলারা। দ্বিতীয় প্রথাটি হল, কেবল সন্ধিপুজোয় দীক্ষিত মানুষ পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারেন, বাকি দিনগুলোয় সবাই দিতে পারেন অঞ্জলি। আদি থেকেই এই রীতি চলে আসছে। পুজোর একমাস আগে থেকেই রায়বাড়িতে বাড়িতে উৎসবের হাওয়া লেগে যায়। পাড়ার মানুষদের নিয়ে একাদশীর দিন বিজয়া সম্মিলনীও হয়ে থাকে যাতে পাড়ার সবাই আবৃত্তি, নাচ, গান ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। দুর্গাপুজোর পর লক্ষ্মীপুজোতে মহিলারা উপোস করেন। ভোগে খিচুড়ি আর আলুর দম খাওয়ানো হয়।

রায়বাড়ির শান্তনু রায়ের সঙ্গে কথা বলে কয়েকটি তথ্য জানা গেল। করোনা অতিমারির মধ্যেও দুর্গা পুজো এবং বিজয়া সম্মিলনীর অনুমতি পাওয়া গেছে। তবে মানুষের ভালোর জন্যই পুজো কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই বছর নবমী এবং লক্ষ্মীপুজোতে ভোগের আয়োজন করা হবে না। দুর্গা অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলিতেও বিপুল জনসমাগম হয়। সেটা বন্ধ করতে ঠিক করা হয়েছে যে, পুরোহিতমশাই মাইকে মন্ত্র পড়বেন। সবাই বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেবেন। অঞ্জলি হয়ে গেলে পুজো কমিটির তরফ থেকে ফুল সংগ্রহ করে এনে মায়ের পায়ে দেওয়া হবে। সাধারণ মানুষের মন্দিরে আসার প্রয়োজন পড়বে না এবং সংক্রমণও রোধ করা যাবে।

এই সমস্ত পুজোর আয়োজনের দায়িত্বে থাকেন অরুণকুমার রায়। তারই নির্দেশ মেনে পুজো হয়। পুজোর সমস্ত খুঁটিনাটি তাঁর নখদর্পণে। পুজোয় কোনও চাঁদা নেওয়া হয় না। মায়ের নামে যে সম্পত্তি,যেমন ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখা টাকা, জমি-জমা, বিনিয়োগ ইত্যাদির টাকাতেই পুজোর সকল খরচ বহন করা হয়।