উত্তর দিনাজপুরে চাঞ্চল্য, পাঞ্জিপাড়া গ্রামে তৃণমূল সদস্যের বাড়িতে ইডির হানা

উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর ব্লকের (ED Raid) পাঞ্জিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য। খবর ছড়ায়, তৃণমূল কংগ্রেসের এক পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে…

Uttar Dinajpur: IT Department Raids Panchipara Gram Panchayat Member’s House

উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর ব্লকের (ED Raid) পাঞ্জিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য। খবর ছড়ায়, তৃণমূল কংগ্রেসের এক পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে হঠাৎ করেই অভিযান চালিয়েছে আয়কর দফতর (ED Raid) । ভোরবেলা একদল কেন্দ্রীয় আধিকারিক ও নিরাপত্তা কর্মী ওই বাড়িতে ঢুকে পড়েন। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ তল্লাশি অভিযান। ঘটনাস্থলে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। এলাকার মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করলেও পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী কাউকে কাছে আসতে দেয়নি।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই পঞ্চায়েত সদস্য দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামে প্রভাবশালী। সাম্প্রতিক কালে তাঁর নামে বেশ কিছু আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে সরকারি প্রকল্পের টাকা বন্টন এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে গ্রামে নানা কানাঘুষো চলছিল। তার জেরেই আয়কর দফতরের নজরে আসে তিনি। শুক্রবার সেই সূত্রেই অভিযান চালানো হয়েছে বলে দাবি।

   

অভিযান(ED Raid) শুরু হওয়ার পর থেকেই গ্রামবাসীদের মধ্যে কৌতূহল বাড়তে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সকাল ছ’টা নাগাদ হঠাৎ করেই সাদা পোশাকের বেশ কয়েকজন আধিকারিক (ED Raid) গাড়ি থেকে নেমে সরাসরি ওই বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা গোটা এলাকা ঘিরে ফেলেন। এরপর চলে ঘরোয়া তল্লাশি। বাড়ির বিভিন্ন ঘর থেকে নথি ও একাধিক ফাইল জব্দ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

তবে ঠিক কী কী উদ্ধার হয়েছে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। যদিও স্থানীয়দের দাবি, বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও সোনার গয়না উদ্ধার হয়েছে। তবে আয়কর দফতরের তরফে এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হয়নি। দফতরের তরফে শুধু জানানো হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এই অভিযান চালানো হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।

এই ঘটনার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র চাপানউতোর। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, শাসক দলের দুর্নীতি আবারও প্রমাণিত হল। তাঁদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের প্রাপ্য টাকা লুট করেই পঞ্চায়েত সদস্যরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন। তাই আয়কর দফতরের মতো সংস্থা যখন হানা দেয়, তখনই সেই সব অনিয়ম ফাঁস হয়ে পড়ে।

Advertisements

অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্ব দাবি করেছেন, এটি সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। বিজেপি নেতাদের ইশারাতেই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁদের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরাট সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। সেই সাফল্যে জল ঢালতেই এই সব পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলায় যেখানে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রবল, সেখানে এই ধরনের অভিযান পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভাজন তৈরি হচ্ছে। একদল মনে করছেন, সত্যিই দুর্নীতি হয়েছে এবং তারই ফল এই অভিযান। আবার অন্য একটি অংশ মনে করছে, শাসক দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে আইটি দফতরকে নামানো হয়েছে।

দিনভর এই ঘটনার জেরে গোটা এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দোকানপাট আংশিক বন্ধ ছিল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষের ভিড় জমেছে। সবাই একটাই প্রশ্ন তুলছেন— আসল সত্যি কী? অভিযানে কত টাকা উদ্ধার হয়েছে? নাকি সবটাই শুধুমাত্র রাজনৈতিক নাটক?

আইটি দফতরের তল্লাশি চলতে থাকায় রাত পর্যন্ত বাড়িতে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গ্রামের মানুষ উদ্বিগ্ন, আগামী দিনে এই ঘটনার প্রভাব কীভাবে পড়বে স্থানীয় রাজনীতিতে। তবে একথা বলাই যায়, এই অভিযানে উত্তর দিনাজপুরের রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন শুরু হয়েছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News