আর মাত্র দুদিন। তারপরেই ঠিক হয়ে যাবে কে হতে চলেছেন হোয়াইট হাউজের পরবর্তী মালিক। এরমধ্যেই তীব্র চাপানউতোর চলছে গোটা দেশজুড়ে। ট্রাম্প না কমলা? এই ইঁদুর দৌড় যখন চরমে ঠিক তখনই বিশ্বের ‘গণতন্ত্রের জ্যাঠা মশাইয়’র ভোট প্রক্রিয়ায় সুর কাটল বাংলার সিপিএম! শুনতে আশ্চর্য লাগছে বটে! হ্যাঁ বঙ্গ ভোটের ছোঁয়া এবার সুদূর মার্কিন মুলুকে (USA election 2024)। কেমন? এরাজ্যের মতোই দেদার ব্যালট চুরি চলছে বাইডেনের দেশে। কিন্তু এও কী সম্ভব? উন্নত, আধুনিক গণতন্ত্রে কী করে হয়? এসব তো তৃতীয় বিশ্বের এঁদো গলিতে ভরা দেশের গণতন্ত্রের পক্ষেই মানানসই।
তা বটে, কিন্তু বর্তমান মার্কিন গণতান্ত্রিক ভোটপ্রক্রিয়া যেন অনেকটা সিপিএমের (CPM) দেখানো পথেই হাঁটছে। আশি-নব্বইয়ের দশকে বাংলার ভোটে ব্যালট চুরি, ব্যালট জ্বালিয়ে ভোটে কারচুপির মতো বিষয়গুলি বোরোলীনের মতোই ‘বঙ্গ জীবনের অঙ্গ’ হয়ে উঠেছিল। তখন ছিল না ভোটার কার্ডও। সুতরাং ব্যালট জালিয়াতি করে বামেদের ক্ষমতায় টিকে যাওয়া নিয়ে অভিযোগ ওঠে বিস্তর। পরে ভোটার কার্ড চালু করা নিয়ে প্রয়াত প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার টিএন সেশনের সঙ্গে জ্যোতি বসুর সংঘাত কারও অজানা নয়। কারণ ওই ভোটার কার্ডের মাধ্যমেই ‘সীমাহীন’ ভোট বা ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইছিল তৎকালীন কমিশন।
বাম আমল এখন অতীত। কিন্তু সেই অতীতের ঐতিহ্য আজও বহন করে চলেছে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল। গত একদশকে পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা ভোট প্রতিবারই ব্যালট চুরি থেকে ভোটহিংসায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে বাংলা। এযেন এক অবিরাম প্রক্রিয়া! কিন্তু মার্কিন মুলুকের (USA election 2024) মতো একটি অতি উন্নত দেশে বামেদের কৌশল শেষপর্যন্ত অবলম্বন করল? শুনেই মুচকি হেসে উঠল মশাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ওই স্ট্যাচুটি। কী যেন নাম, ওহ স্ট্যাচু অব লিবার্টি!
হয়েছে কী, আমেরিকায় ৫ নভেম্বর ভোটের দিন ধার্য হলেও ইতিমধ্যেই ‘আর্লি ভোটিং’ শুরু হয়ে গিয়েছে সেদেশে। আর ওয়াশিংটনেই সম্প্রতি ৪৭৫টি ব্যালট পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানও হয়েছে, নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত এই ব্যালটগুলো নিরাপত্তাজনিত ত্রুটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার কারও দাবি, এই ব্যালটগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে।
নির্বাচন কর্মকর্তারাও ভীষণ উদ্বিগ্ন। তারা ভোটারদের আশ্বস্ত করে বলছেন যে, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তদন্তের মাধ্যমে আসল সত্যি বের করা হবে।
এমনকী ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তারজন্যও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাইডেনের দেশ। এরমধ্যে সম্প্রতি ল্যারি স্যাভেজ নামে এক রিপাবলিকান নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ব্যালট বাক্স চুরি করেছিলেন। যদিও ট্রাম্প সমর্থক ওই রিপাবলিকান নেতার দাবি তিনি নির্দোষ। এই ধরনের ঘটনা শুধু রাজধানী ওয়াশিংটনে নয় সেদেশের বিভিন্ন শহরে ঘটে চলেছে। যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন মার্কিন মুলুকের আম জনতা। তার কারণ ‘এঁদো গলিতে ভরা’ তৃতীয় বিশ্বের এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে অতীতে খুব একটা পরিচিত নয় তাঁরা।
স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উত্তাল মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলিও। তাঁরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং গ্রহণযোগ্যতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। মোদ্দা কথা, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বামপন্থা মানবে না! তবে বাম-বাংলার ‘এঁদো গলি’তে ব্যালট চুরির কৌশল মনে হয় ধীরে ধীরে রপ্ত করছে আব্রাহাম লিঙ্কনদের উত্তরসূরীরা…।