বাংলা ভাষা আমাদের পরিচয়, আমাদের আত্মার উৎস। অথচ (Durga Puja) আজকের সময়ে দেশের নানা প্রান্তে বাংলা ভাষা ও বাঙালির প্রতি অপমানজনক মন্তব্য, অবজ্ঞা এবং বিদ্বেষমূলক আচরণের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা গভীর উদ্বেগের। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়া হলো বাংলার হৃদয়স্পর্শী উৎসব — দুর্গাপুজোকে।(Durga Puja)
শহরের দুই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো কমিটি, পাথুরিয়াঘাটা ৫-এর পল্লি এবং চালতাবাগান সর্বজনীন, এ বছর তাদের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে বাংলা ভাষাকেই। থিমের নাম দেওয়া হয়েছে— ‘হরফ’, যা শুধু অক্ষরের কথাই বলে না, বলে ইতিহাস, সংস্কৃতি, আত্মপরিচয়ের গল্পও। এক কথায়, মাতৃভাষা বাংলাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে এবারের দুর্গাপুজোর মূল মণ্ডপ এবং সজ্জা(Durga Puja)
পাথুরিয়াঘাটার উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, হরফ থিমের মাধ্যমে তাঁরা তুলে ধরতে চলেছেন বাংলা হরফের বিবর্তনের এক দীর্ঘ ইতিহাস। চর্যাপদের সময় থেকে শুরু করে মধ্যযুগ, মুদ্রণযন্ত্রের আবির্ভাব, রবীন্দ্র-নজরুলের সাহিত্য, আধুনিক বাংলা ভাষার উদ্ভব— সবটাই দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হবে শিল্পের মাধ্যমে। এতে থাকবে হস্তলিখিত পুঁথি, প্রাচীন লিপির ছাপ, পুরনো ছাপাখানার প্রতিরূপ, এবং ডিজিটাল যুগে বাংলা ভাষার উপস্থাপনা।(Durga Puja)
এই থিমের ঘোষণাও ছিল যথেষ্ট স্বতন্ত্র। একেবারে বর্ষার দিনে, চপ-মুড়ি আর চায়ের আড্ডায় ঘরোয়া পরিবেশে পুজো উদ্যোক্তারা জানান দেন— এবারের পুজো শুধু উৎসব নয়, প্রতিবাদেরও ভাষা। তাঁদের স্পষ্ট বার্তা: “আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান। আমাদের পুজোর ভাষা বাংলা।”(Durga Puja)
পুজোকমিটির প্রধান উদ্যোক্তা ও কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলার ইলোরা সাহা বলেন, “আমরা চাই বাংলা ভাষায় ভাব বিনিময় হোক। এই পুজোর মাধ্যমে আমরা সেই আবেগকেই তুলে ধরছি।” তিনি আরও জানান, শুধু মণ্ডপের থিমেই নয়, সমস্ত পুজোর ঘোষণাপত্র, বিজ্ঞপ্তি, অনুষ্ঠান সূচি— সবই থাকবে বাংলায়। এমনকি বিদেশি অতিথিদের জন্যও বাংলা অনুবাদসহ একটি নির্দেশপত্র থাকবে।(Durga Puja)
চালতাবাগান সর্বজনীনের উদ্যোক্তারাও জানিয়েছেন, এবারের পুজোয় বাংলা গানের, কবিতার ও নাটকের একাধিক পারফরম্যান্স হবে। থাকবে ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস,(Durga Puja) যেখানে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের কথাও স্মরণ করা হবে। তাঁরা মনে করেন, বাঙালি যতদিন তার ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসবে, ততদিন তার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে না।
এই ধরনের সামাজিক বার্তা মূলক থিম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দুর্গাপুজো কেবলমাত্র আনন্দ, আলোকসজ্জা আর ভোগ নয়— এটি বাঙালির সংস্কৃতি, আত্মপরিচয় ও প্রতিবাদের শক্তিশালী মাধ্যমও হতে পারে। বাংলা ভাষার জন্য এই কণ্ঠস্বর শুধু প্রয়োজনীয় নয়, সময়োপযোগীও।(Durga Puja)
বর্তমান সময়ে যখন জাতীয় স্তরে বহু ভাষাভাষীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, তখন বাংলার এই দুই দুর্গাপুজো কমিটির পদক্ষেপ এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। মাতৃভাষা বাংলা যেন শুধু শ্রদ্ধার বিষয় না হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ— এটাই তাদের মূল বার্তা(Durga Puja)
সত্যিই, ভাষা যে কেবল কথা বলার মাধ্যম নয়, বরং জাতির আত্মার প্রকাশ, তা আবারও প্রমাণ করল এই পুজোর থিম— ‘হরফ’।