সোমবার সকালেই রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ফেলে দেয় এক বড় খবর। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা এবং মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে (Jiban Krishna Saha) গ্রেফতার করে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। বহুদিন ধরেই নাম জড়াচ্ছিল এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়। দীর্ঘ অনুসন্ধান, হানা ও জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে এই পদক্ষেপ করল তদন্তকারী সংস্থা। গ্রেপ্তারের পর বিকেলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগর সাব-ডিভিশন হাসপাতালে। সেখানে তাঁর নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। এরপর তাঁকে আদালতে পেশ করার কথা রয়েছে।
গ্রেফতারের পরিস্থিতি
ইডি সূত্রে খবর, সোমবার ভোরে হানা দেয় সাহার বাড়িতে। তদন্তকারীরা জানান, হানা চলাকালীন নথি নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন সাহা। এমনকি নিজের মোবাইল ফোন ঝোপে ফেলে পালানোর চেষ্টাও করেন বলে অভিযোগ। যদিও শেষমেশ তাঁকে পাকড়াও করে ইডি আধিকারিকরা। এ দিন সকালেই তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তৈরি হয়।
বিধাননগর হাসপাতালে চিকিৎসা পরীক্ষা
আইন অনুযায়ী, গ্রেপ্তারির পর অভিযুক্তের প্রাথমিক শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। সেই কারণেই সোমবার বিকেলে জীবনকৃষ্ণ সাহাকে(Jiban Krishna Saha) আনা হয় বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তাঁর রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তিনি শারীরিকভাবে আপাতত সুস্থ আছেন।
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সাহার নাম
পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় নিয়োগ দুর্নীতির মামলা হিসেবেই ধরা হচ্ছে এই এসএসসি কেলেঙ্কারি। শিক্ষক ও অশিক্ষক পদে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে ইডি ও সিবিআই ইতিমধ্যেই একাধিক রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও উচ্চপদস্থ আমলাকে গ্রেপ্তার করেছে। কয়েক মাস আগে এই মামলায় গ্রেপ্তার হন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছিল বেআইনি নিয়োগের জন্য। জীবনকৃষ্ণ সাহার নামও সেই তালিকায় উঠে আসে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, অনৈতিক উপায়ে নিয়োগে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং আর্থিক লেনদেনে যুক্ত ছিলেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য এই গ্রেপ্তারিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করা হয়েছে। দলের মুখপাত্ররা জানান, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি বিজেপির নির্দেশে কাজ করছে এবং বিরোধী শিবিরকে দুর্বল করার জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, “আইন আইনের পথে চলুক। কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এভাবে একের পর এক তৃণমূল নেতাকে টার্গেট করা হচ্ছে।”
অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্ব এই গ্রেপ্তারিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঠিক পদক্ষেপ বলে স্বাগত জানিয়েছে। তাঁদের দাবি, “এসএসসি দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকা গায়েব হয়েছে। হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থী চাকরি পাননি। এর দায় যারা নিয়োগ চক্রে জড়িত, তাদের শাস্তি পেতেই হবে।”
সামনে কী?
ইডি সূত্রে খবর, জীবনকৃষ্ণ (Jiban Krishna Saha) সাহাকে জেরা করে অনেক তথ্য মিলতে পারে। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও অনেক প্রভাবশালী নাম উঠে আসতে পারে বলে আশঙ্কা তৃণমূলের অন্দরে। আগামী দিনে ইডি আদালতে তাঁকে হেফাজতে চাইবে বলে জানা গিয়েছে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
রাজ্যের ছাত্র-যুবদের মধ্যে এই গ্রেপ্তারি মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বহু চাকরিপ্রার্থী, যারা বছর বছর পরিশ্রম করেও চাকরি পাননি, তাঁরা মনে করছেন ন্যায়বিচারের দিকে এই পদক্ষেপ এক ধাপ এগোনো। অন্যদিকে, অনেকে আবার রাজনীতির পাল্টাপাল্টি দোষারোপে ক্ষুব্ধ।
সব মিলিয়ে, জীবনকৃষ্ণ সাহার গ্রেপ্তারি শুধুমাত্র একজন নেতার আইনি সমস্যার বিষয় নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির তদন্তে একটি নতুন অধ্যায়। আগামী দিনে আদালতের রায় এবং ইডি-র তদন্ত কোন পথে এগোয়, সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই।