তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে রদবদল নিয়ে জল্পনা ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। গত কয়েক মাসে দলের ভিতরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হল রদবদল। জানুয়ারি মাস প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত দলের গঠন বা মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি দলীয় সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে রদবদলের সম্ভাবনা একবার আবার উস্কে উঠেছে। তিনি এক অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘রদবদল হবেই’’—এই মন্তব্যের পর থেকেই তৃণমূলের অন্দরে চলছে তীব্র আলোচনা।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পারফরম্যান্স তত্ত্ব’ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব ফর্মুলা—এই দুটি বিষয় নিয়ে তৃণমূল শিবিরে আলোচনা চলছে। কবে এবং কিভাবে রদবদল হবে, তা নিয়ে দলীয় নেতারা একাধিক তত্ত্বের দিকে ইঙ্গিত করছেন। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি প্রশ্নই ঘুরছে, ‘‘পৃথকভাবে অভিষেকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রদবদল হবে, না কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে তা হবে?’’
গুরুতর আলোচনা শুরু হয়েছে প্রবীণ এবং নবীন নেতাদের মধ্যে চলা দ্বন্দ্ব নিয়ে। গত কয়েক মাসে তৃণমূল শিবিরে নবীন-প্রবীণ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেকটাই প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ এই অস্বস্তি তৃণমূলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। কিছু নেতার বিরোধিতা প্রকাশ্যে দেখা গেছে, যা দলের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
তবে সম্প্রতি তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে দেখা গেছে, প্রবীণ নেতাদের গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। কালীঘাটে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রবীণ নেতাদের প্রতি দলের সমর্থন স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কাঁথি কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচনে প্রবীণ নেতা অখিল গিরির নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে দলের মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাওয়া গেছে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুব্রত বক্সির প্যানেলকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যা দলের মধ্যে প্রবীণ নেতাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার ইঙ্গিত।
এমন পরিস্থিতিতে “ওল্ড ইজ গোল্ড”—এই স্লোগানটি আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রবীণ নেতাদের প্রতি দলীয় সমর্থন এবং তাদের ভূমিকা বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। বিশেষ করে কাঁথি কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচনে অখিল গিরির প্রাধান্য প্রমাণ করে, আগামীতে সংগঠন এবং মন্ত্রিসভার কাজকর্মেও প্রবীণদের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে।
এইসব ঘটনার পর, শোনা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারি মাসে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কর্মী সভা হতে পারে, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করতে পারেন। সেই সভায় দলের ভবিষ্যৎ রূপরেখা এবং মন্ত্রিসভা-সহ দলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
এখন সবাই তাকিয়ে আছে, আসল পরিবর্তন কবে আসবে, এবং সেই পরিবর্তন কিভাবে দলের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে।