২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি আসনটি তৃণমূল কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়ে যায়। তৃণমূল প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়কে হারিয়ে এই কেন্দ্রে জয় ছিনিয়ে নেন বিজেপির প্রার্থী ডক্টর জয়ন্ত কুমার রায়। তখন থেকেই এই কেন্দ্র তৃণমূলের কাছে একপ্রকার ‘রিক্লেম টার্গেট’ হয়ে দাঁড়ায়। এর পর থেকে বিভিন্ন ভোটের ফলাফলে একাধিকবার প্রমাণ হয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলায় বিজেপির সংগঠন অনেকটাই শক্তিশালী এবং তৃণমূলের সামনে চ্যালেঞ্জ বিশাল।
লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা বিধানসভা ও পৌরসভা ফলাফল পর্যালোচনা করলে ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়। রাজগঞ্জ, ডাবগ্রাম ও মালবাজার—এই তিনটি বিধানসভা বাদ দিলে বাকি সবকটিতে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। অর্থাৎ, বিজেপির সংগঠন এই অঞ্চলগুলোতে যে জমি শক্ত করেছে, তা বলাই যায়। পাশাপাশি, জলপাইগুড়ি জেলার চারটি পৌরসভা—জলপাইগুড়ি সদর, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি এবং মালবাজার—এই চার জায়গাতেই বিজেপি কার্যত একতরফা লিডে থেকেছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জলপাইগুড়ি পৌরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি, মাত্র ১টিতে লিড পেয়েছিল তৃণমূল। ময়নাগুড়িতে ১৭টির মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি, ধূপগুড়িতে সব ১৬টি ওয়ার্ডেই বিজেপি এগিয়ে, এমনকি মালবাজারেও ১৫টির মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডেই বিজেপির স্পষ্ট প্রভাব।
এর আগে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও জলপাইগুড়ির সাতটি আসনের মধ্যে রাজগঞ্জ, জলপাইগুড়ি এবং মালবাজার ছাড়া বাকি চারটি আসন বিজেপির দখলে ছিল। যদিও পরে উপনির্বাচনে ধূপগুড়ি আসনটি তৃণমূলের দখলে আসে, তবুও সামগ্রিক চিত্রে বিজেপির আধিপত্য স্পষ্ট।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই এবার ২০২৬ সালের আগে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে ‘সাতে সাত’ বিধানসভা থেকেই লিড নেওয়ার টার্গেট বেঁধে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) । মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে অভিষেক কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “এই সাতটি বিধানসভা থেকে একটিতেও পিছিয়ে থাকার জায়গা নেই। সাতের সাতটাই আমাদের দখলে আনতেই হবে।” অভিষেকের এই ঘোষণা কার্যত দলের কাছে চ্যালেঞ্জ ও অঙ্গীকার দুই-ই।
শুধু লক্ষ্য স্থির করেই থেমে থাকেননি অভিষেক (Abhishek Banerjee) । জেলায় দলের সংগঠন ঢেলে সাজাতেও উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। বৈঠকে জেলার ব্লক সভাপতিদের কার্যক্ষমতা ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন এবং সেখানে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা থাকলে নেতৃত্বের মতামতও নেন। এই প্রস্তাবিত নামের তালিকা ইতিমধ্যে রাজ্য নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি-ই।
জলপাইগুড়ি তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “২০১৯ সালের হার আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। এবার আর কোনও ভুল হবে না। অভিষেকদা নিজে যখন মিশনে নেমেছেন, তখন সাতের সাতটা বিধানসভা থেকে লিড আমাদের আসবেই।”
অন্যদিকে, বিজেপি শিবির অবশ্য এই কৌশলকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেই জানা যাচ্ছে। তাদের দাবি, “এই জেলার মানুষ জানে কে কত কাজ করেছে। শুধু টার্গেট বেঁধে দিলে হবে না, কাজ করতে হবে। আমরা মাঠে রয়েছি।”
তবে তৃণমূল শিবিরে এখন স্পষ্ট বার্তা—জলপাইগুড়িতে আর এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেওয়া নয়। সাতের সাত বিধানসভা থেকে লিড এনে লোকসভা আসন পুনরুদ্ধারের নীলনকশা এখন অভিষেকের হাতে।