এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতির অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি হুমায়ুন কবীর 9Humayun Kabir)। মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক। ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার ঘোষণা করেছেন। এই হুমায়ুন তৃণমূলে যোগ দিয়ে বিধায়কপদ ছেড়েছিলেন। তারপর রাজনীতির ময়দানে তাঁর নানা কারনামা। অনেক ওঠানামা।
১৯৮২ সালে কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতির ময়দানে যাত্রা শুরু হয় হুমায়ুন কবীরের। তখন অধীররঞ্জন চৌধুরী আরএসপিতে। তিনি ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধীর হাত ধরে কংগ্রেসে যোগ দেন। এই অধীরের ছত্রছায়ায় মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে উত্থান হয় হুমায়ুনের। ১৯৯৯ সালে অধীররঞ্জন চৌধুরী প্রথমবার বহরমপুরের সাংসদ হন। সেই সময় তাঁর কাছের লোকদের মধ্যে একজন ছিলেন হুমায়ুন। সেই আনুগত্যের ‘পুরস্কার’ পেয়েছিলেন এক দশক পরে। ২০১১ সালে রেজিনগর কেন্দ্রের কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের টিকিট পান। প্রথমবার ভোটে লড়েই সোজা বিধানসভায়।
সেই বিধায়ক পদ ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন হুমায়ুন কবীর। ২০১২ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট ভেঙে যায়। কংগ্রেসের পাঁচ মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। সেই সময় তৃণমূলের পক্ষ থেকে কংগ্রেসের দুই বিধায়ককে মন্ত্রিত্বের টোপ দেওয়া হয় বলে শোনা যায়। একজন ইংরেজবাজারের কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। আরেকজন রেজিনগরের হুমায়ুন কবীর। তৃণমূলে যোগ দিয়ে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হন হুমায়ুন।
এরপর শুরু হয় অন্য খেলা। মন্ত্রিত্বের স্বাদ বেশিদিন পাননি হুমায়ুন কবীর। সংবিধান অনুযায়ী তাঁকে মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে তৃণমূলের টিকিটে ভোটে জিততে হত। সেটাও আবার মন্ত্রী হিসেবে শপথের ছয় মাসের মধ্যে। দুই কংগ্রেস বিধায়কের ছেড়ে যাওয়া আসনে উপনির্বাচন হয়। ইংরেজবাজারে কৃষ্ণেন্দু জিতলেও রেজিনগরে হেরে যান ঘাসফুলের প্রার্থী হুমায়ুন কবীর।
মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয়। বিধায়ক পদ তো আগেই ছেড়েছিলেন। তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন হুমায়ুন কবীর। অভিযোগ করেন, তৃণমূলের কয়েকজন নেতার কারণেই উপনির্বাচনে তাঁকে হারতে হয়েছিল। এই ধরনের দলবিরোধী কাজের জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করেন রেজিনগর কেন্দ্র থেকে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন তৃতীয় স্থানে।
২০১৬ সালের ভোটের পর তৃণমূলে ফেরা খুব কঠিন হয়ে পড়ে হুমায়ুন কবীরের কাছে। ফের তিনি কংগ্রেসের হাত ধরেন। তখন আবারও তিনি অধীরের অনুগামী। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের হয়ে ময়দানে ছিলেন। সেই বছরেই বিজেপির পতাকা ধরেন হুমায়ুন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মুর্শিদাবাদের পদ্ম প্রার্থী। জিততে পারেননি। ২০২১ সালের ভোটের আগে ফের তৃণমূলে যোগ দেন। তারপর ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক।
দলবদলু হুমায়ুন কবীর কখনই তৃণমূলের সংগঠনে গুরুত্ব পাননি। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মুখ খুলেছেন। শাস্তি পেয়েছেন। এবার তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। নতুন দল গড়ার ঘোষণা করেছেন। এ নিয়েই এখন জোর চর্চা।