Ram Navami West Bengal: বাংলাজুড়ে দাপট দেখাচ্ছে রাম-রাজনীতি। রামের নামে স্লোগান। উচ্ছ্বাস। হুংকার। বছর খানেক আগে বিজেপির নেতাদের হাত ধরে শুরু রামনবমী এখন তৃণমূলেরও গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। যারা একসময় এই রামের বিরোধিতা করে রামমোহন কিংবা রামকৃষ্ণের উদাহরণ টানতেন। তাঁদের গলাতেই এখন জয় শ্রীরাম স্লোগান।
রামনবমীতে বিজেপির মিছিল দেখে একসময় তৃণমূলের নেতারা কটাক্ষ করতেন। সরাসরি নিশানা করতেন শ্রীরামকে। রামায়ণে সীতার অগ্নিপরীক্ষার প্রসঙ্গ টেনে বলতেন, “অযোধ্যার রাম মহিলাদের সম্মান দিতে জানতেন না। বিজেপিও একই পথের পথিক।” কেউ কেউ বলতেন, “বিজেপির রাম নিজের স্ত্রী সীতার অগ্নিপরীক্ষা নিয়েছিলেন। আর বাঙালির রাম হলেন রাজা রামমোহন রায়। যিনি মহিলাদের জন্য সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।”
শুধু রামমোহন নন। বিজেপি বিরোধিতায় শ্রীরামকৃষ্ণও ছিলেন তৃণমূলের অস্ত্র। অনেকেই বলতেন এবং বলেন, “বাঙালির রাম শ্রীরামকৃষ্ণ। যিনি সকলকে নিয়ে চলার কথা বলেন।” পালটা বিজেপির যুক্তি ছিল, “হুগলির কামারপুকুরের চট্টোপাধ্যায় পরিবার অর্থাৎ শ্রীরামকৃষ্ণর পরিবারের কুলদেবতা ছিলেন ভগবান শ্রীরাম।” একথা স্পষ্ট, বঙ্গে বিজেপির উত্থানের সঙ্গে রামনবমীর পসার জমেছে। বাংলার মাটিতে উত্তর ভারতের সংস্কৃতির আমদানি নিয়েও বিজেপিকে বিঁধতেন তৃণমূলের একাংশ। এ নিয়ে আবার বিজেপির অস্ত্র ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। পদ্ম নেতারা বলতেন, “রামকৃষ্ণ বলেছেন, যত মত তত পথ। রামের পথে হাঁটতে সমস্যা কি?”
রামনবমীর মিছিলে সবাই হেঁটেছে। শওকত মোল্লার মতো তৃণমূলের সংখ্যালঘু বিধায়কও রামনবমী পালন করেছেন। রবিবার বীরভূমে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল রামনবমীর মিছিলে হাঁটেন এবং রামের নামে জয়ধ্বনি দেন। হাওড়ার সালকিয়ায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলে পা মেলান তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। বরানগরের রামনবমীর শোভাযাত্রায় অংশ নেন সাংসদ সৌগত রায় ও বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়িতে মেয়র গৌতম দেব রামের পুজো দিয়ে দিন শুরু করেন। এছাড়াও শ্রীরামপুরে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইসলামপুরে কানাইলাল আগরওয়ালাও অংশ নেন রামনবমীর অনুষ্ঠানে। তৃণমূল-বিজেপির সঙ্গে কোথাও কোথাও বামেদেরও পা মেলাতে দেখা গিয়েছে।
বছর চারেক আগে একুশের বিধানসভা ভোটের সময় রামনবমীর তীব্র সমালোচকরাও এ বছর রামের জয়ধ্বনী করে মিছিল করেছেন। রাজা রামমোহন রায়ের বাড়ির কাছেই মিছিল করেছে তৃণমূল। ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির সামনে সেই গেরুয়া মিছিলে অংশ নেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, গোলাপি পাগড়ি ও ওড়না পরে। রামমোহন লাইব্রেরি সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা কুণাল ঘোষ বরাবরই বিজেপির রামনবমীর সমালোচক। রামমোহন রায়ের প্রসঙ্গ টেনে শ্রীরামের সমালোচনা করেছেন। এর জেরে ত্রিপুরায় তাঁর বিরুদ্ধে মমালাও হয়। রবিবার রামনবমীর মিছিল থেকে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ান।
রবিবার ফেসবুকে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ লেখেন, “প্রশ্নটা রামনবমী পালন নিয়ে নয়।
পালনের পদ্ধতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে।
বাংলার ঘরানায় দেবতার পুজো হবে, নাকি ভিনরাজ্যের সংস্কৃতিতে হিংস্র উন্মাদনা, বিকট শব্দে বেপরোয়া গতির বাইক, ছোটাছুটি, চিৎকার, অস্ত্র, পেশীশক্তির অপরিণত আস্ফালনের চেষ্টার বহিঃপ্রকাশ দেখতে হবে? এসব কোন্ রামায়ণে আছে?
ওই সংস্কৃতিটা বাংলায় ঢোকানোর চেষ্টা চলছে। সেটা আটকানো দরকার। বাংলার পুজো, বাংলার উৎসব হবে বাংলার ঘরানায়। অন্য কিছু রাজ্যের উগ্র বিশৃঙ্খলাকে বাংলায় প্রশ্রয় দেবেন না। রামনবমী যাঁরা পালন করবেন, একশোবার করুন। আমন্ত্রণে সুযোগমত যাব। কিন্তু রাজনীতির কারণে রামনবমীকে ব্যবহার করে ভিন্নগোত্রীয় সংস্কৃতিকে বাংলায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা বরদাস্ত করা যাবে না। বাংলার রীতি, ঐতিহ্য, ঘরানা বাংলারই থাক।
পুনশ্চ: রামমন্দির নির্মাণের পর অযোধ্যা এলাকার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি পরাজিত হয়েছে। রামও ওখানে বিজেপিকে আশীর্বাদ করেননি।”