কেন্দ্রের তিন ভাষা নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ তামিলনাড়ুুর সরকারের

তামিলনাড়ুতে জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের মন্তব্যের পর রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রধান এর মতে, ‘সমগ্র শিক্ষা’ প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয়…

তামিলনাড়ুতে জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের মন্তব্যের পর রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রধান এর মতে, ‘সমগ্র শিক্ষা’ প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয় সরকার তামিলনাড়ু সরকারকে তিন ভাষা নীতি পুরোপুরি কার্যকর না করলে কোনও তহবিল ছেড়ে দেবে না।

বারাণসীতে অনুষ্ঠিত কাশী তামিল সংগমে ধর্মেন্দ্র প্রধান তামিলনাড়ু সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তামিলনাড়ু কেন একমাত্র রাজ্য যা এই নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, যখন বাকি দেশের সব রাজ্যই এটি গ্রহণ করেছে?’’ প্রধান আরও অভিযোগ করেন যে, তামিলনাড়ু সরকার প্রথমে কেন্দ্রের শর্ত মেনে নিয়েছিল, কিন্তু পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন‘‘তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করছে, জনগণের কল্যাণের জন্য নয়।’’

   

প্রধানের এই মন্তব্য তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকে এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তামিলনাড়ুর শিক্ষা মন্ত্রী অনবিল মহেশ কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’ বলে আক্রমণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন ‘‘৪০ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত এতে প্রভাবিত হচ্ছে, কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের পিএম শ্রী প্রকল্পে সই করতে বলছে, যা এনইপি এবং তিন ভাষা নীতির অনুমোদন হিসেবে দেখা হবে।’’

অনবিল আরও বলেছেন, তামিলনাড়ু প্রতিবছর শিক্ষক মজুরির জন্য ৯২০ কোটি টাকা এবং ‘অধিকার ভিত্তিক শিক্ষা’ প্রকল্পের জন্য ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের এই তহবিল স্থগিত রাখা তামিলনাড়ুর শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর এবং একটি ‘ভাষাগত যুদ্ধ’ সৃষ্টি করবে।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন প্রধানের মন্তব্যকে ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন, ‘‘সংবিধানের কোন অংশে তিন ভাষা নীতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে? শিক্ষা তো যৌথ তালিকায় রয়েছে, শুধু কেন্দ্রের অধিকার নয়। তামিলরা এই হুমকি মেনে নেবে না।’’

তামিলনাড়ুর উপমুখ্যমন্ত্রী উদয়নিধি স্টালিনও প্রধানের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘তামিলনাড়ু কখনই তিন ভাষা নীতিকে মেনে নেবে না।’’

কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা পি চিদাম্বরমও প্রধানের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং তা তামিলনাড়ু ও সংসদের প্রতি অবমাননা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে সংসদের অবমাননা এবং অগণতান্ত্রিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

অন্যদিকে, ছাত্র সংগঠনগুলি, বিশেষ করে ছাত্র ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া,নতুন ইউজিসি খসড়া নীতি, তিন ভাষা নীতি এবং এনইপি -এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি) শাস্ত্রী ভবনে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি তামিলনাড়ুর শিক্ষা ব্যবস্থায় চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে দাবি জানাবে।

বিরোধী দল এআইএডিএমকে-র নেতা এডাপ্পাদি কে. পালানিস্বামীও এই বিষয়ে কেন্দ্রের অবস্থানকে সমালোচনা করেছেন এবং স্পষ্ট করেছেন যে তামিলনাড়ু তার দুই ভাষা নীতি (তামিল এবং ইংরেজি) অনুসরণ করবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, এবং শাসক দলের নেতৃত্বে একতাবদ্ধভাবে কেন্দ্রের এই নীতি বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া হয়েছে।