পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তুলোধোনা করে সমাজমাধ্যমে আবার বিস্ফোরক শুভেন্দু অধিকারী (suvendu)। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক অশান্তি এবং ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। গতকাল কলকাতায় কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এক বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (suvendu), কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বিজেপির অভিযোগ, রাজ্য সরকারের তোষণ নীতি এবং দুর্নীতির কারণে হিন্দু সম্প্রদায় বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি হারাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গে যোগ্যরা চাকরিহারা আর হিন্দুরা বাস্তুহারা !!!
মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রতিক অশান্তি বা দাঙ্গার ঘটনাগুলো রাজ্য পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এই নির্দেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা… pic.twitter.com/KTkXgKIaWd
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) April 13, 2025
মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ও হিন্দুদের বাস্তুচ্যুতি
মুর্শিদাবাদ জেলায় সম্প্রতি ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যাতে তিনজন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিপুর, সুতি এবং শমশেরগঞ্জ এলাকায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর পাথর ছুঁড়েছে, গাড়িতে আগুন ধরিয়েছে এবং রাস্তা অবরোধ করেছে। এই ঘটনায় ১৫০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন।
শুভেন্দু অধিকারী (suvendu) দাবি করেছেন
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, এই সহিংসতার ফলে ধুলিয়ান এলাকা থেকে ৪০০-এর বেশি হিন্দু পরিবার ভয়ে নদী পার করে মালদহের বৈষ্ণবনগরের দেওনাপুর-শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণ নীতি জেহাদি উপদ্রবকে উৎসাহিত করেছে, যার ফলে হিন্দুরা নিজের দেশে উদ্বাস্তু হচ্ছেন।”
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) মোতায়েন করা হয়েছে। আদালত পরিস্থিতিকে “গুরুতর এবং অস্থিতিশীল” বলে উল্লেখ করে রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছে। বিজেপি নেতারা এই রায়কে রাজ্য সরকারের “অযোগ্যতার প্রমাণ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে খুশি করতে গিয়ে তারা কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি, ফলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বেড়েছে।”
পাম সানডেতে রুশ আঘাত: সুমি শহরে নিহত ৩৪, ইউক্রেন বলছে ‘সরাসরি যুদ্ধাপরাধ’
বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে
বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সহিংসতার সময় হিন্দুদের দোকান লুটপাট করা হয়েছে, মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে এবং পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। সুকান্ত মজুমদার বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যকে জেহাদিদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতি আর সহ্য করা যায় না।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই ধরনের সহিংসতা পাঁচ মিনিটে বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি: যোগ্যদের চাকরি হারানো
অন্যদিকে, ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ওএমআর শিটে কারচুপি, জাল মেধাতালিকা তৈরি এবং ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার মতো গুরুতর অনিয়ম ঘটেছে। এই রায়ের ফলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। বিজেপি অভিযোগ করেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর নিকট আত্মীয়দের পৃষ্ঠপোষকতায় এই দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন (suvendu), “এত বড় দুর্নীতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়। আদালত বারবার যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা আলাদা করার নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু রাজ্য সরকার তা পালন করেনি। কারণ, তা করলে তৃণমূলের নেতাদের দুর্নীতি প্রকাশ হয়ে যেত। ফলে, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি হারাতে হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “মমতা এবং তাঁর আত্মীয়রা এই দুর্নীতির প্রধান সুবিধাভোগী। নিজেদের বাঁচাতে তারা যোগ্যদের বলি দিয়েছেন।”
বাতিল হওয়া চাকরির মধ্যে অনেক যোগ্য প্রার্থীও রয়েছেন, যাঁরা লিখিত পরীক্ষা এবং সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন। কলকাতা, মালদহ, হুগলি, বালুরঘাট, তমলুক এবং কৃষ্ণনগরে জেলা পরিদর্শক (ডিআই) অফিসে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়েছেন, তালা ভেঙেছেন এবং রাস্তা অবরোধ করেছেন। একজন প্রতিবাদী শিক্ষক অভিজিৎ ব্যাপারী বলেন, “আমরা মর্যাদার সঙ্গে কাজ করেছি। আমাদের কোনো দোষ না থাকলেও চাকরি হারাতে হলো। এটা শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংস।”
বিজেপির বিক্ষোভ ও পদত্যাগের দাবি
গতকালের বিক্ষোভ মিছিলে বিজেপি নেতারা মুর্শিদাবাদের সহিংসতা এবং এসএসসি দুর্নীতিকে একত্রিত করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে যোগ্যরা চাকরিহারা এবং হিন্দুরা বাস্তুহারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই দুই সংকটের জন্য দায়ী। তিনি নৈতিক দায়বদ্ধতা এড়াতে পারেন না। তাঁর পদত্যাগই একমাত্র সমাধান।” তিনি মমতাকে “চাকরি চোর” এবং “হিন্দু হত্যাকারী” সরকারের প্রধান বলে আখ্যায়িত করেন।
সুকান্ত মজুমদার বলেন
সুকান্ত মজুমদার বলেন, “মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের উপর হামলা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংস মমতার শাসনের ব্যর্থতার প্রমাণ। তিনি রাজ্য চালাতে অযোগ্য।” বিজেপি আরও দাবি করেছে, রাজ্য সরকারের বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া এবং তোষণ নীতি সহিংসতা বাড়িয়েছে। পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে চিঠি লিখে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদিয়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইন (এএফএসপিএ) জারির দাবি জানিয়েছেন।
মমতার প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদের সহিংসতার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, “ওয়াকফ আইন কেন্দ্রের তৈরি। আমরা এই আইন সমর্থন করি না এবং রাজ্যে এটি কার্যকর করব না।” তিনি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এসএসসি দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি যোগ্য প্রার্থীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা জানাননি।
মুর্শিদাবাদের সহিংসতা এবং এসএসসি দুর্নীতি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। বিজেপির বিক্ষোভ এবং মমতার পদত্যাগের দাবি রাজ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। বাস্তুচ্যুত হিন্দু পরিবার এবং চাকরি হারানো শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ হবে।