কলকাতার কসবা (Sukanta) এলাকায় একটি আইন কলেজের ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার(Sukanta) । তিনি এই ঘটনাকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যর্থতার প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর মানসিকতার উপর প্রশ্ন তুলেছেন।
সুকান্ত মজুমদার (Sukanta) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা এখানে একের পর এক ঘটতেই থাকবে কারণ মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষণের ঘটনাগুলোকে ‘ছোটখাটো’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এটাই সেই মানসিকতার ফলাফল।” এই বক্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার পটভূমি
কলকাতার কাসবা এলাকায় সম্প্রতি একটি আইন কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা রাজ্যের নারী নিরাপত্তার প্রশ্নকে ফের সামনে এনেছে। পুলিশ ইতিমধ্যে এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে এবং কয়েকজন সন্দেহভাজনকে হেফাজতে নিয়েছে। তবে এই ঘটনার পর থেকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে বিরোধী দলগুলো তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছে।
সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta) এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধকে ‘ছোটখাটো’ বলে উপেক্ষা করেন, যা রাজ্যে এই ধরনের অপরাধ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তাঁর এই মনোভাব পুলিশ প্রশাসনকেও প্রভাবিত করে, যার ফলে অপরাধীরা নির্ভয়ে এই ধরনের কাজ করে।”
সুকান্ত আরও দাবি করেন যে, রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, “কলকাতার মতো শহরে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের কার্যালয় রয়েছে, সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষ কীভাবে নিরাপদ বোধ করবে?”
মমতার প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক বিতর্ক
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় এখনও কোনও সরাসরি মন্তব্য করেননি, তবে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্ররা সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক স্টান্ট’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “বিজেপি এই ধরনের ঘটনাকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যবহার করছে।
মুখ্যমন্ত্রী সবসময় নারী নিরাপত্তার প্রশ্নে সোচ্চার থেকেছেন এবং পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।” তবে, সুকান্ত মজুমদার (Sukanta) এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “এটি রাজনৈতিক স্টান্ট নয়, এটি রাজ্যের মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ন। মুখ্যমন্ত্রীকে এখন জবাব দিতে হবে।”
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি (Sukanta)
এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৃহত্তর প্রশ্ন তুলেছে। গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা সামনে এসেছে, যা নিয়ে বিরোধী দলগুলো মমতা সরকারের সমালোচনা করে আসছে। বিশেষ করে, ২০২৪ সালে আরজি কর মেডিকেল কলেজের এক নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি উঠেছিল। সুকান্ত মজুমদার সেই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আরজি করের ঘটনায়ও মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। এখনও তিনি একই ভুল করছেন।”
পুলিশের ভূমিকা
পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রশাসন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য দেখায়, যার ফলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। (Sukanta) তিনি বলেন, “পুলিশের কাজ অপরাধীদের ধরা, কিন্তু তারা শাসক দলের নেতাদের সুরক্ষা দিতে ব্যস্ত।” এই অভিযোগের জবাবে পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা ঘটনার তদন্তে পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছি এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে।”
DA মামলায় মুখ্যসচিব-অর্থসচিবকে নোটিস, অসন্তোষ সরকারি কর্মীদের
ভবিষ্যৎ প্রভাব
এই ঘটনা ও সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta) বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। বিজেপি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে, যখন তৃণমূল দাবি করছে যে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সংবেদনশীল ঘটনাকে ব্যবহার করছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কোন দিকে যায়, তা রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কাসবার গণধর্ষণের ঘটনা শুধুমাত্র একটি অপরাধের ঘটনা নয়, এটি রাজ্যের নারী নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নকে সামনে এনেছে। সুকান্ত মজুমদারের তীব্র সমালোচনা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর আক্রমণ রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনার তদন্ত কীভাবে এগোয় এবং সরকার এই ধরনের ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেয়।