তৃণমূল, বিজেপি, বাম….. বাঁ হাতের খেলায় নাচাচ্ছেন মহারাজ

গত বছর পশ্চিমবঙ্গে শিল্প নিয়ে আসার জন্য যারা স্পেন গিয়েছিলেন তাদের অনেককেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্প সম্মেলনে ছিলেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিবৃতিও দিয়েছেন, এই রাজ্যের শিল্প উন্নয়নের…

Sourav Ganguly Political Ties and Influencers

গত বছর পশ্চিমবঙ্গে শিল্প নিয়ে আসার জন্য যারা স্পেন গিয়েছিলেন তাদের অনেককেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্প সম্মেলনে ছিলেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিবৃতিও দিয়েছেন, এই রাজ্যের শিল্প উন্নয়নের ব্যাপার নিয়ে। এদের মধ্যে ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী (Sourav Ganguly)।  গত বছর স্পেনে গিয়ে বিদেশ থেকে শিল্প আনার বদলে মুখ্যমন্ত্রীর মুখপাত্র হিসেবে সৌরভ শালবনীতে শিল্প গড়ার কথা বলেছিলেন।  তিনি বলছেন, ‘অর্থনীতি মজবুত হচ্ছে। উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীর ১০০% চেষ্টা রয়েছে। লগ্নীবান্ধব সহযোগিতা এখানে অপরিসীম।’

একই কথা শোনা গিয়েছিল এক বছর আগে সৌরভ গাঙ্গুলীর মুখে। থুড়ি।  ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌরভ গাঙ্গুলী। সেদিন সিনেমা জগতের আর কোন লোক ছিল না।

   

স্পেনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌরভ গাঙ্গুলী শুধু শিল্প উন্নয়নের কথা বলতে জাননি, তারই পাশাপাশি স্প্যানিশ ফুটবল এসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের এই রাজ্যে ফুটবলে উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা নিতে অনুরোধ করেছিলেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।  মাঝখান থেকে মোহনবাগানে মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য এবং তারই লোকেদের দ্বারা পরিচালিত মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে স্পেনের অনেক খেলোয়াড় ও প্রশিক্ষকের উপস্থিতি হয়েছে। আর এদের ও সেই সঙ্গে সদস্যদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চাশ লক্ষ টাকাও দিলেন।

এক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে সৌরভ গাঙ্গুলী বিদেশ থেকে শিল্প আনা এবং বিদেশের ফুটবল পরিকাঠামো নিয়ে বাংলার ফুটবলের কি অবস্থা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগ জিরো।

এর আগে সৌরভ গাঙ্গুলী ছিলেন বিজেপির কাছের লোক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুত্র জয় শাহকে লোধা কমিশনে নিয়মের বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন নিজের ও জয় শাহর সময়সীমা বাড়াতে। পাশাপাশি সিএবিতে সেই লোধা কমিশনের নিয়ম মেনে অন্য লোককে সরিয়ে দাদাকে সিএবি তে সর্বোচ্চ পদে বসিয়ে দিলেন। তার আগে সিপিএমকে ধরে একাধিক জমি পাওয়া , একাডেমী এবং সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটা ভালো ইস্কুল তৈরি করা জন্য জমি পাওয়া নিজের এবং পরিবারের লোকেদের জন্য ।আদালতের প্রশ্ন, একজন খেলোয়াড় হিসেবে তাকে একাডেমী করার জন্য জমি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার জন্য জমি কেন ? তিনি তো শিক্ষাবিদ নয়।

কিছু শিক্ষাবিদ এগিয়ে এসেছিলেন বেআইনিভাবে বামফ্রন্টের এই জমি বিতরণকে কেন্দ্র করে। আদালতে মামলা করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জমি বাতিল করে দেওয়া হলো। তারপর তৃণমূল সরকার আবার জমি দিল। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা তো বিস্মিত। সুপ্রিম কোর্ট যেখানে বাতিল করে দিয়েছে সেখানে আবার তৃণমূল সরকার কিভাবে জমি দিল। ‌ এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কে তীব্র ভৎসনা এবং সরকারি দুটি দপ্তরের উপর ফাইন এবং সেই সঙ্গে সৌরভ গাঙ্গুলীর উপর কলকাতা হাইকোর্ট ১০০০০ টাকা ফাইন করেছিল।

সৌরভ গাঙ্গুলী প্রাক্তন খেলোয়াড়। ক্রীড়াবোদ্ধারা বলছেন, এই রাজ্যে ক্রিকেটে কোন উন্নতি হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর দৌলতে প্রথমে নিজে সচিব ও সভাপতি হলেন।‌ তারপর দাদাকে সচিব ও সভাপতি করলেন। মাঝে কাকা কেও কোষাধ্যক্ষ করলেন। আর সিএবির অনুমোদিত অর্ধেক ক্লাব অন্য লোককে ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করে চলেছে। সেই সঙ্গে সিএবি তে তাদের ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে যাকে পাঠাচ্ছে তার থেকেও অর্থ রোজগার করছে। এরই পাশাপাশি ভিন্ন রাজ্য থেকে ক্রিকেটার এসে বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে।এবছরও রঞ্জি ট্রফিতে নক আউট পর্যায়ে উঠতে পারেনি বাংলা। অথচ সিএবিতে নির্বাচন হয় না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গাঙ্গুলী ভাইরা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে, ক্ষমতা ভোগ করে চলেছেন।

সবচেয়ে মজার কথা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, সিপিএমের লোকেরা বলে বিজেপি তৃণমূল সেটিং। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সৌরভ গাঙ্গুলীর ক্ষেত্রে তিনটে দলেরই চমৎকার সেটিং। তাঁরা বলছেন, সৌরভ ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। কিভাবে অর্থ উপার্জন করতে হয়, ভালোভাবেই জানেন। তাই রিলায়েন্স ও সঞ্জীব গোয়েৎকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আইএসএল ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু করা। সেই সঙ্গে আইএসএল এ সঞ্জীব গোয়েঙ্কার হয়ে এটিকে কেনার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। শেয়ারহোল্ডার ছিলেন। রাস্তায় নেমে টিভির পর্দায় দেখানো হয়েছে এটিকে মোহনবাগানের জন্য ( তখন এই নামই ছিল) জনসাধারণের কাছে আবেদন করতে। ‌ অথচ তার আগেই এটিকে নিজেদের নাম তুলে নিয়েছিল।

সবকিছু দেখে ক্রীড়া ও রাজনৈতিক বোদ্ধারা অনেকেই বলছেন, ‘নাচাও পুতুল যত দক্ষ বাজিকরে, নাচাও তেমতি তুমি বামফ্রন্ট তৃণমূল ও বিজেপিকে।’ বিজেপি, তৃণমূল বামফ্রন্ট এই বিষয়ে একটা কথাও বলেনি , বলবেও না ।