পশ্চিমবঙ্গের কেশিয়াড়ী থানার অন্তর্গত একটি জাতীয় সড়কে পুলিশের অভিযুক্ত তোলাবাজির কারণে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সোমবার ভোর রাতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় একটি টুরিস্ট বাস সামনের গাড়িতে ধাক্কা মারে, ফলে বাসের চালক সহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। এই ঘটনার জন্য সরাসরি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একাংশকে দায়ী করা হচ্ছে, যারা রাস্তায় গার্ডরেল বসিয়ে গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায়ে ব্যস্ত ছিল। ঘটনার পর কেশিয়াড়ী থানার আইসি বিশ্বজিৎ হালদারের বিরুদ্ধে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোর রাতে কেশিয়াড়ী থানার পুলিশকর্মীরা জাতীয় সড়কে গার্ডরেল বসিয়ে যানবাহন আটকাচ্ছিল। অভিযোগ, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ট্রাক ও বাণিজ্যিক গাড়ি থেকে টাকা আদায় করা। রাতের অন্ধকারে টর্চলাইটের সাহায্যে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছিল তারা। এই সময় সামনের একটি গাড়ি হঠাৎ গতি কমালে পেছন থেকে আসা একটি টুরিস্ট বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনায় বাসের চালক গুরুতর আহত হন এবং বেশ কয়েকজন যাত্রীর আঘাত লাগে। আহতদের দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu adhikari) তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি বারংবার বলে এসেছি, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এখন দলদাস ও তোলাবাজ মমতা পুলিশে রূপান্তরিত হয়েছে। রাজ্যের রাস্তাগুলো ওদের জন্য এটিএম মেশিনের মতো। জাতীয় ও রাজ্য সড়কে গার্ডরেলের মেলা বসানো হয়েছে, যাতে গাড়ির গতি কমে এবং তোলা আদায়ে সুবিধা হয়। এর সঙ্গে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বা পথচারীদের সুরক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এই গার্ডরেলগুলোর জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, এই দিনও পুলিশকর্মীরা তোলাবাজিতে এতটাই মগ্ন ছিল যে, তারা যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভুলে গিয়েছিল।
আমি বারংবার বলে এসেছি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এখন দলদাস ও তোলাবাজ মমতা পুলিশে রূপান্তরিত হয়েছে। রাজ্যের রাস্তাগুলি ওদের জন্য এটিএম মেশিনের মতো। জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কগুলিতে গার্ডরেলের মেলা বসিয়ে দিয়েছে, যাতে যানবাহনের (বিশেষত ট্রাক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক গাড়ির) গতি হ্রাস পায় ও তোলা… pic.twitter.com/qQhR3juXd1
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) March 24, 2025
শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, এই ঘটনার পর কেশিয়াড়ী থানার আইসি বিশ্বজিৎ হালদার ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে তিনি আইসির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে দোষারোপ করতে নারাজ। তিনি বলেন, “আমি আইসি বিশ্বজিৎ হালদারের খুব একটা দোষ দেখি না। আসল কথা, উনি যে তোলাবাজি স্কুলের মাস্টারমশাই, সেই স্কুলের অধ্যক্ষ হলেন ধৃতিমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি জেলায় বালি ও পাথরের খাদান, গরু পাচার, বেআইনি কাঠের ব্যবসা সহ নানা অবৈধ কারবার চালান। এই তোলা তাঁর পকেট হয়ে কালীঘাট ও ক্যামাক স্ট্রিট পর্যন্ত পৌঁছে যায়।” তাঁর মতে, আইসি কেবল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কেশিয়াড়ী এলাকায় পুলিশের এই ধরনের কার্যকলাপ নতুন নয়। রাতের বেলা প্রায়ই গাড়ি আটকে টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠে। একজন স্থানীয় ট্রাক চালক বলেন, “প্রতিদিন রাতে এখানে গার্ডরেল বসিয়ে আমাদের থামানো হয়। টাকা না দিলে ছাড়ে না। কিন্তু এই গার্ডরেলের জন্য গাড়ি চালাতে ভয় লাগে।” তিনি আরও বলেন, এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপের জন্য রাস্তায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
আরো দেখুন প্লে-অফের যোগ্যতা হারিয়েও নজর কাড়লেন মশাল ব্রিগেডের তরুণ ফুটবলার
ঘটনার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে আহত যাত্রীরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন যাত্রী বলছেন, “রাতে হঠাৎ গার্ডরেল দেখে গাড়ি থামাতে গিয়ে বাসটা ধাক্কা মারে। পুলিশ শুধু টাকা নেওয়ার ধান্দায় ছিল, আমাদের নিরাপত্তার কথা কেউ ভাবেনি।” এই ভিডিওটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “রাস্তা আটকে তোলা আদায় করতে গিয়ে যাত্রীরা মরুক গে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি এবং রাতে ডিউটিতে থাকা পুলিশকর্মীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও কেশিয়াড়ী থানার আইসির অপসারণের দাবি জানাই।” তিনি এই বিষয়ে তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
পুলিশের তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসন চাপে রয়েছে। এই দুর্ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের কার্যকলাপ ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।