সংগঠনের শতবর্ষপূর্তি উদযাপনকে সামনে রেখে এবার বাংলার মাটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)। শতবর্ষপূর্তি উৎসব শুরু হবে এই বছরের বিজয়া দশমী থেকে এবং চলবে আগামী বছরের বিজয়া দশমী পর্যন্ত। এই এক বছরে বাংলা জুড়ে হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংঘ। মহালয়ার দিন থেকে এই হিন্দু জাগরণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে।
মহালয়ার দিন বাংলার নানা প্রান্তে সংঘের স্বয়ংসেবকদের গণবেশে একত্রিকরণ ও পথসঞ্চালনের আয়োজন করা হচ্ছে। লক্ষ্য একটাই — হিন্দু সমাজে ঐক্য ফিরিয়ে আনা, পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করা এবং ধর্মীয় চেতনায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। সংঘ সূত্রে খবর, এই আয়োজন শুধুমাত্র কর্মসূচির সূচনা নয়, আগামী এক বছরজুড়ে RSS-এর বহুস্তরীয় প্রচারের শুরু।
২০০০ হিন্দু সম্মেলনের পরিকল্পনা বাংলায়
RSS-এর বাংলার একাধিক শাখা সংগঠন মিলিয়ে এক বিশাল কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচির অন্তর্গত রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও ব্লকে মোট ২০০০-র বেশি হিন্দু সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সম্মেলনগুলিতে স্থানীয় মানুষদের অংশগ্রহণ করানো হবে, যাতে সমাজের সবস্তরের মানুষ এই ভাবনায় যুক্ত হতে পারেন।
“প্রতি ঘর, প্রতি পাড়া, প্রতি গ্রাম” মডেল
হিন্দুদের মধ্যে যোগাযোগ, ভাববিনিময় ও চেতনার বিস্তারের জন্য ‘প্রতি ঘর, প্রতি পাড়া, প্রতি গ্রাম’ মডেলে কাজ শুরু করবে সংঘ। RSS সূত্রে জানানো হয়েছে, স্বয়ংসেবকরা বাংলার প্রত্যন্ত গ্রাম ও শহরতলিতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবেন। হিন্দুদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরার পাশাপাশি, বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে সেই গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও করা হবে।
RSS-এর এক পদস্থ নেতা জানান, “বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ভোলানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। আমরা চাই, বাংলার হিন্দুরা আবার নিজেদের গর্বিত ইতিহাসকে চিনুক এবং সম্মান করুক।”
২২ অগস্ট বাংলায় আসছেন দত্তাত্রেয় হোসবলে
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২২ অগস্ট বাংলায় আসছেন সংঘের সর্বভারতীয় সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবলে। তিনি রাজ্যের শীর্ষ RSS নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন এবং রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। তার সফরে হুগলি, নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় সংগঠনের অবস্থা পর্যালোচনা করা হবে।
হিন্দুদের ঐক্যের বার্তা
RSS-এর মতে, বর্তমানে বাংলায় হিন্দুদের মধ্যে বিভাজনের চিত্র প্রকট হয়ে উঠছে — রাজনৈতিক মতপার্থক্য, সম্প্রদায়গত দ্বন্দ্ব ও সাংস্কৃতিক বিচ্যুতি এই বিভাজনের কারণ। এই প্রেক্ষিতে সংঘের বক্তব্য, “হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের দাবি।” মহালয়ার দিন প্রতিটি জেলাতে সংঘের শাখা সংগঠনগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণে রাস্তায় নামবে হাজার হাজার স্বয়ংসেবক। তারা পথসঞ্চালনের মাধ্যমে হিন্দু ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেবে।
সংঘের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
RSS-এর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অনুযায়ী, বাংলা আগামী দশকে সংঘের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠবে। ২০২৫ সালে RSS তার শতবর্ষ উদযাপন করবে এবং সেই উপলক্ষে আগামী বছরের মধ্যে বাংলার প্রায় প্রতিটি ব্লকে সংগঠনের ঘাঁটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সংঘের এক মুখপাত্র বলেন, “বাংলা হিন্দু সভ্যতার গর্ভ। এখান থেকে শুরু হয়েছিল রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের মতো মনীষীদের পথচলা। আজ সেই বাংলার মাটিতে আমাদের আরও সংগঠিত হতে হবে।”
সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
যদিও RSS-এর এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন রাজ্যের কিছু রাজনৈতিক দল ও বামপন্থী সংগঠন। তাঁদের মতে, এটি বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি চালানোর প্রচেষ্টা। তবে সংঘের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, “আমরা কারও বিরোধিতা করছি না, আমরা চাই হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে।”
সংঘের শতবর্ষে বাংলায় এমন সর্বব্যাপী কর্মসূচি নিঃসন্দেহে রাজনীতির ময়দানে নতুন আলোচনার জন্ম দেবে। তবে এক বছর পর দেখা যাবে — এই হিন্দু জাগরণ কর্মসূচি বাংলার সমাজে কতটা প্রভাব ফেলল এবং রাজনৈতিক সমীকরণে তার প্রতিফলন কতটা পড়ল।