বাঁকুড়ায় জেলা কমিটি ঘোষণায় বিজেপির অন্দরে বিক্ষোভের ঝড়

বিজেপির (Bjp) বাঁকুড়া জেলা কমিটি ঘোষণার পর থেকেই দলে ভাঙন ও অসন্তোষের যে ছবি সামনে এসেছে, তা আবারও প্রমাণ করছে রাজনৈতিক সংগঠনের ভেতরকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কতটা…

Protests erupt within BJP over announcement of district committee in Bankura

বিজেপির (Bjp) বাঁকুড়া জেলা কমিটি ঘোষণার পর থেকেই দলে ভাঙন ও অসন্তোষের যে ছবি সামনে এসেছে, তা আবারও প্রমাণ করছে রাজনৈতিক সংগঠনের ভেতরকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কতটা প্রকট। সম্প্রতি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাঁকুড়ার মাটিতে কর্মীদের মধ্যে ফেটে পড়ল তীব্র ক্ষোভ। অভিযোগ, দলের একাংশের মতামত উপেক্ষা করে ‘অযোগ্য’ এবং ‘বিতর্কিত’ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। বিশেষ করে দুক্ষিরানী মুদির জেলা সম্পাদক পদে নিয়োগকে ঘিরেই সর্বাধিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

দলের স্থানীয় স্তরের বহু কর্মী ও নেতা প্রকাশ্যে দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে দুক্ষিরানী মুদিকে জেলা সম্পাদক পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। তাঁদের অভিযোগ, ওই নেত্রীর কোনও সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা নেই। বরং তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে এসে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি গুরুত্ব পাচ্ছেন। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম করা পুরনো কর্মীদের প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে।

   

বুধবার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বাঁকুড়ার একাধিক মণ্ডলে বিজেপি (Bjp) কর্মীরা বিক্ষোভে শামিল হন। তাঁরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এমনকি একাধিক মণ্ডল কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। প্রতিবাদী কর্মীদের হুঁশিয়ারি— যদি জেলা কমিটি থেকে বিতর্কিত নিয়োগ প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে সাংগঠনিক কাজকর্ম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

স্থানীয় স্তরে বিজেপির (Bjp) এই অস্থিরতা অবশ্য শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে রাজনৈতিক সুবিধা এনে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, গত কয়েক বছরে বাঁকুড়া জেলা বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। লোকসভা ভোটে এই জেলার আসন বিজেপির দখলে এসেছে। কিন্তু ক্রমশই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং গোষ্ঠীকোন্দল বৃদ্ধি পাওয়ায় সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ছে।

প্রসঙ্গত, বিজেপির(Bjp) জেলা কমিটি ঘোষণার পর ক্ষোভের ছবি নতুন নয়। গত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় একই ছবি দেখা গিয়েছে। অভিযোগ, দলীয় নেতৃত্ব তৃণমূল থেকে আসা ‘প্যারাসুট প্রার্থী’দের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এতে পুরনো কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। বাঁকুড়ার ঘটনাও সেই প্রবণতারই বহিঃপ্রকাশ।

ক্ষুব্ধ কর্মীদের বক্তব্য, “আমরা রাস্তায় নেমে দলের হয়ে লড়াই করি। পুলিশি নিগ্রহ মেনে নিই। কিন্তু আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কোনও দাম দেওয়া হচ্ছে না। যারা হঠাৎ দলে ঢুকেছে, তাদের হাতেই সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে। এটা কখনও মেনে নেওয়া যায় না।”

Advertisements

এই পরিস্থিতিতে জেলা নেতৃত্ব এখন প্রবল চাপে। একদিকে তাঁরা চাইছেন, ক্ষুব্ধ কর্মীদের শান্ত করতে। অন্যদিকে, রাজ্য নেতৃত্বের নেওয়া সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা তাঁদের হাতে নেই। ফলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে সংগঠনের ভেতরেই।

রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ধরনের অভ্যন্তরীণ সংঘাত যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। কারণ, সাধারণ কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া বিজেপির মতো দল সংগঠন বিস্তার করতে পারবে না। আর কর্মীরা যদি ক্ষোভে ভোগেন বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন, তাহলে মাঠের লড়াই কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠবে।

এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে। শাসক দলের দাবি, বিজেপির ভেতরে যে দলাদলি, তাতেই প্রমাণিত হচ্ছে, বাংলার মানুষ এই দলে আস্থা রাখতে পারছেন না।

সব মিলিয়ে, বাঁকুড়ায় বিজেপির(Bjp) জেলা কমিটি ঘোষণার পর যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তা সামান্য ক্ষোভ বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। বরং এটি প্রমাণ করছে, সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এখন বিজেপি নেতৃত্বের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।