বীরভূমে (Birbhum) তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরেই চলছে দানা বাঁধা শক্তি যুদ্ধ। একসময় যাঁর নামেই জেলাজুড়ে তৃণমূল সংগঠন চলত, সেই অনুব্রত মণ্ডল আজ ক্রমেই কোণঠাসা হচ্ছেন নিজের দলের মধ্যেই।
বুধবার সেই জল্পনায় ঘৃতাহুতি দিল বোলপুরের কঙ্কালীতলার বোনডাঙ্গা তৃণমূল কার্যালয়ে হওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। যেখানে অনুব্রত ঘনিষ্ঠ একঝাঁক তৃণমূল কর্মী দেখা করলেন তাঁরই দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ ও বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের সঙ্গে।
অনুব্রতর ছায়া সরে যাচ্ছে?
বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাঁইথিয়া বনগ্রাম পঞ্চায়েতের বহু কর্মী, পঞ্চায়েত সদস্য ও সমিতির সদস্যরা এদিন সরাসরি বলেন—”অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে এখন কোনও যোগাযোগ রাখা সম্ভব নয়। সাংগঠনিক কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা পাচ্ছি না। কাজলদা আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তাই আমরা ওনার সঙ্গেই থাকব।” এই মন্তব্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে, অনুব্রতের ছায়া ধীরে ধীরে সরছে দলের মধ্যেই। রাজনৈতিক মহলের মত, এটি অনুব্রত শিবিরের জন্য বড় ধাক্কা।
‘আইসিকে গালি’ বিতর্কে আরও চাপে কেষ্ট
এর আগেই অনুব্রত মণ্ডল বিতর্কে জড়িয়েছেন একটি অডিও ক্লিপের সূত্রে, যেখানে তিনি এক আইসিকে গালিগালাজ করছেন, এমনকি পুলিশকর্মীর স্ত্রী ও মাকেও কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করছেন। এই ঘটনার জেরে পুলিশের পক্ষ থেকে তলব পাঠানো হলেও বারবার তা এড়িয়ে গেছেন অনুব্রত।
বিরোধীরা ইতিমধ্যে তাঁর গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে। তার ফলে দলীয় স্তরে অস্বস্তি বাড়ছে, এবং এই প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেস অনুব্রতের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াচ্ছে না।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ওই অডিওতে যাঁর নাম উঠে এসেছে, সেই নেতাই কাজল শেখ—যিনি বরাবরই অনুব্রতের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত।
অনুব্রতর দুর্দিনে কাজলের উত্থান
অনুব্রত মণ্ডল বর্তমানে দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি। এই পরিস্থিতিতে বীরভূম তৃণমূলে তাঁর দাপট অনেকটাই ক্ষয়ে গেছে। সেই শূন্যস্থান দখলে এগিয়ে এসেছেন কাজল শেখ। বর্তমানে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়াতেও নিজের জায়গা করে নিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। জেলার বহু নেতা-কর্মী, যারা এতদিন অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন, তাঁরাই এখন ধীরে ধীরে কাজলের দিকে ঝুঁকছেন।
কী বলছে রাজনৈতিক মহল?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “অনুব্রত মণ্ডল রাজনীতির ময়দানে এখনও চূড়ান্তভাবে হার মানেননি ঠিকই, তবে সংগঠন ও প্রশাসনে তাঁর দখল এখন আর আগের মতো নেই। তাঁর অনুপস্থিতিতে কাজল শেখের উত্থান একেবারে প্রাকৃতিক ঘটনা।”
তাঁদের মতে, দলের অন্দরে এত বড় গোষ্ঠী পরিবর্তন হলে তার প্রভাব আগামী পঞ্চায়েত ও বিধানসভা নির্বাচনে পড়বেই। বিশেষ করে বীরভূমের মতো জেলা, যা দীর্ঘদিন তৃণমূলের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি ছিল।
অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। দলের ভিতরেই তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর উত্থান এবং অনুগামীদের সরে যাওয়া একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তাঁর দাপটের যুগ হয়তো শেষের পথে।
তবে অনুব্রতের মতো চতুর রাজনৈতিক নেতার লড়াই এখানেই থেমে যাবে কি না, তা এখনই বলা যায় না। তবে আপাতত বীরভূমে কেষ্টর মাটি কিছুটা হলেও আলগা হচ্ছে, সে বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল।