লোকসভা নির্বাচনের এক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে ফের আলোড়ন তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। আগামী ১৫ অগাস্টের পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের (New Political Party) ঘোষণা করবেন বলেই জানালেন। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দুই দিনাজপুর ও নদিয়ার কিছু অংশ—এই মিলিয়ে প্রায় ৫০-৫২টি বিধানসভা আসনে প্রার্থী দিতে চলেছে তাঁর নতুন দল।
হুমায়ুন কবীরের এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, তিনি এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই। বরং, তাঁর অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। হুমায়ুন কবীরের দাবি, জেলা স্তরের নেতারা দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশই মানছেন না।
একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন বলেন, “আমি শুধু মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রিক দল গড়ব না। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়ার একটা অংশ, সব মিলিয়ে ৫০-৫২টি আসন নিয়ে দলটা করব। বলদের পক্ষে লোক রয়েছে, না ছাগলের পক্ষে লোক রয়েছে, সেটা এবার চোখে দেখাতে হবে।”
এই ‘বলদ’ ও ‘ছাগল’ মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। হুমায়ুন কবীর এর মাধ্যমে মূলত ইঙ্গিত করেছেন যে, দলের বর্তমান জেলা নেতৃত্ব কার্যকারিতাহীন ও অনুপযুক্ত। তাঁর মতে, “দল করে প্রমাণ করতে চাই, চাষ বলদ দিয়েই হয়, ছাগল দিয়ে নয়।”
তাহলে কি তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক ভাঙতেই এই পদক্ষেপ? এই প্রশ্নে হুমায়ুন কবীর বলেন, “ক্ষমতায় আসবেন নেত্রীই। উনিই চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কিন্তু আমি চাই নেত্রী বুঝুন, যে যোগ্য কর্মীদের জায়গা না দিলে, ভোটারদেরও অপমান করা হচ্ছে। যোগ্য ভোটাররা যাতে সম্মান পান, সেই দিকেই নজর থাকবে আমার নতুন দলের।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হুমায়ুন কবীরের এই ঘোষণার ফলে মুর্শিদাবাদ সহ সংলগ্ন জেলাগুলিতে সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশ বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে সেইসব এলাকা যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন দুর্বল অথবা জেলা নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ রয়েছে—সেখানে হুমায়ুনের দলকে একটা বিকল্প হিসেবে ভাবতে পারেন অনেকেই।
অন্যদিকে তৃণমূল শিবিরে এই ঘোষণায় অস্বস্তির আঁচ স্পষ্ট। যদিও দলের তরফে এখনও কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া মেলেনি, তবে জেলা নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ, হুমায়ুন কবীর একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা, যিনি একাধিকবার বিধানসভা নির্বাচন জিতেছেন এবং তৃণমূল ও কংগ্রেস দুই দলেই দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন।
এই মুহূর্তে বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূল, বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস জোটের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই চলছে। তার মাঝেই হুমায়ুন কবীরের নতুন দল রাজ্যের সংখ্যালঘু প্রধান জেলাগুলিতে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে একটা কথা নিশ্চিত, ছাব্বিশের নির্বাচনের আগেই রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন উত্তাপের জন্ম দিল হুমায়ুন কবীরের রাজনৈতিক অভিমত।