দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব মোদী, পালটা কুণালের কটাক্ষে হাওয়া গরম

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের উত্তেজনার পারদ চড়ালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। বুধবার বিকেলে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে…

Narendra Modi Slams TMC Over Corruption Ahead of Bengal Visit, Kunal Ghosh Hits Back with Sharp Rebuke”

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের উত্তেজনার পারদ চড়ালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। বুধবার বিকেলে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী মোদী একাধিক পোস্টে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দুর্বল প্রশাসন এবং জনস্বার্থে ব্যর্থতার অভিযোগ তোলেন। পাল্টা কটাক্ষে সরব হন তৃণমূলের কুণাল ঘোষ, যাঁর ভাষায় এই পোস্ট “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত”।

মোদীর হুঁশিয়ারি
প্রধানমন্ত্রী তাঁর পোস্টে লেখেন, “আগামীকাল দুপুরে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির এক জনসভায় ভাষণ দেব। গত এক দশকে এনডিএ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গবাসীর বিপুল প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে, তৃণমূলের দুর্নীতি ও দুর্বল প্রশাসনে মানুষ বিরক্ত।”

   

তিনি আরও লেখেন, “পশ্চিমবঙ্গবাসীর সঙ্গে সময় কাটানো সব সময় আনন্দদায়ক। আগামীকাল আলিপুরদুয়ারে এক অনুষ্ঠানে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলায় সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (CGD) প্রকল্পের শিলান্যাস করা হবে। এই প্রকল্প বহু পরিবারকে উপকৃত করবে, পরিবেশ রক্ষা করবে এবং কর্মসংস্থান তৈরি করবে।” এই পোস্ট ঘিরেই শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা।

কুণালের পাল্টা তোপ
প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে চটেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি কড়া ভাষায় জবাব দিয়ে বলেন, “এই সময়ে এমন রাজনৈতিক পোস্ট না করলেই পারতেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা দেশ একসঙ্গে। সেখানে দাঁড়িয়ে এখন রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছেন মোদীজি।”

তিনি আরও বলেন, “আপনি কাশ্মীরের গ্রামে যাননি, তৃণমূল গিয়েছে। আপনি দু’বছরে মণিপুরে যাননি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়েছেন। এই সময় রাজনৈতিক সফরে এসে বাংলায় বিষ ছড়াতে আসছেন? মিথ্যা পোস্ট করছেন।”

“রাজনৈতিক পর্যটক” বলে কটাক্ষ
কুণাল ঘোষ প্রধানমন্ত্রীকে “রাজনৈতিক পর্যটক” আখ্যা দিয়ে বলেন,“ডুয়ার্সে অনেক পর্যটক আসে, কিন্তু আপনি এসেছেন রাজনৈতিক পর্যটক হয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক সৌজন্য দেখাচ্ছেন। অথচ আপনি মিথ্যা প্রচার করে বাংলার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন।”

Advertisements

তিনি আরও বলেন, “আপনার গুজরাতের মন্ত্রীর ছেলে একশো দিনের কাজের টাকা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। কাঁচের ঘরে থেকে ঢিল ছুঁড়বেন না। বিজেপি শুধু অপপ্রচার করছে, বাস্তবের মাটিতে তাদের অস্তিত্ব নেই।”

কড়া ভাষায় আক্রমণ
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “আপনি খালি হাতে আসছেন। কাজের খতিয়ান নেই। আলিপুরদুয়ারে তৃণমূল বিপুল কাজ করেছে। প্রশাসনিক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ সেটা জানে। আপনার বিষাক্ত রাজনীতির সামনে আমরা কাজ দিয়ে জবাব দেব।”

তিনি বলেন,“আপনি রাজনৈতিক লড়াইকে দেশের সুরক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছেন। এখন সময় রাজনৈতিক লড়াইয়ের নয়, দেশ একযোগে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। কিন্তু আপনি তা ব্যবহার করছেন বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে।”

তৃণমূল আত্মবিশ্বাসী, বিজেপি আক্রমণাত্মক
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের মুখে এই রাজনৈতিক সংঘর্ষ গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। বিজেপি যেখানে দুর্নীতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা তুলে ধরে রাজ্যে নিজেদের জমি শক্ত করার চেষ্টা করছে, সেখানে তৃণমূল আত্মবিশ্বাসী তাদের উন্নয়নমূলক কাজের ভিত্তিতে।

তৃণমূল শিবির মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী এভাবে বারবার বাংলাকে টার্গেট করে “নেগেটিভ ক্যাম্পেইন” চালাচ্ছেন, কারণ বিজেপির নিজের ঘরেই সমস্যা বাড়ছে। অন্যদিকে বিজেপি নেতারা বলছেন, “মোদীজি সত্য বলছেন, তৃণমূলের দুর্নীতি ঢাকতে এখন কুকথা ছাড়া আর কিছু নেই ওদের হাতে।”