পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির দৃশ্যপটে যখন প্রতিটি মুহূর্তে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়, তখন সেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি ও তাদের নেতারা। সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতিতে আলোচিত একটি বিষয় হলো, বিজেপির নেতা দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) মন্দির দর্শন নিয়ে শুরু হওয়া তুমুল বিতর্ক।
সম্প্রতি, দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) দিঘার জগন্নাথ মন্দির দর্শন করার পর থেকে এই বিতর্ক আরও গতি পায়। তিনি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বলেন, “মোদীজি উদ্বোধন করলে মন্দির, মমতা করলে মন্দির নয়, এ বিচার আমার নয়।” এ মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
বিতর্কের সূচনা
দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের দিন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কাঁথিতে সনাতনী ধর্মের সম্মেলন আয়োজন করেন। সেই সম্মেলনে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধতে গিয়ে শুভেন্দু মন্দিরকে ‘অধর্মের মন্দির’ বলে মন্তব্য করেন। এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দিলীপ ঘোষকে(Dilip Ghosh) প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি শুভেন্দুর এই বক্তব্য সমর্থন করেন?
দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) তাঁর উত্তর দেন, “জগন্নাথ মন্দিরেও একজন দ্বৈতাপতি ছিলেন তো, উনি তো ধর্মের মন্দির বলছেন। আমি ওই বিতর্কে যাব না। আমি তো সকালে আরেকটা ধার্মিক সংস্থায় গিয়েছিলাম, তারপর দুপুরে জগন্নাথ মন্দিরে গিয়েছিলাম। সব ভাল, সব ধার্মিক।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি মন্দিরের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে তুলে ধরেন এবং রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরে গিয়ে ধর্মীয় ঐক্য ও শিষ্টাচারের কথা বলেন।
বিজেপির মন্দির রাজনীতি
দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) এর পর আরও একবার বিজেপির মন্দির রাজনীতি নিয়ে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, “আমি পলিসির কথা বলছি। যে বিজেপি মন্দির পলিটিক্স করেছে, মন্দিরকে কেন্দ্র করে আমাদের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, সেই মন্দিরকে বিজেপি বয়কট করতে পারবে। বিজেপি বয়কট করেনি। ব্যক্তিগত ব্যাপার, রুচি রয়েছে, তাঁরা বয়কট করেছেন।” তাঁর এই বক্তব্যের মধ্যে একটি গভীর বার্তা রয়েছে, যেখানে বিজেপির মন্দির পলিটিক্সের ঐতিহ্যকে সমর্থন করা হয়েছে, তবে তা ব্যক্তিগত রুচির ব্যাপার বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) নৈতিক অবস্থান
দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) আরও বলেন, “আমাকে যদি আমার সভাপতি বলতেন, যাবে না, আমি যেতাম না। আমি জানি নৈতিকভাবে কেউ বিজেপির বলতে পারবেন না, ওখানে যাবেন না।” অর্থাৎ, দলের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা না আসলে, তাঁর মন্দির দর্শনে যাওয়ার কোন বাধা নেই। তাঁর বক্তব্যের মধ্যে দলের নির্দেশনা এবং নৈতিকতার এক চমৎকার মিশেল দেখা যায়। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, দিলীপের এই কাজ দল অনুমোদন করে না, তবুও দিলীপের যুক্তি ছিল, রাজনৈতিক জীবনে ব্যক্তিগত পছন্দ বা রুচি এক ভিন্ন বিষয়।(Dilip Ghosh)
রাম মন্দির এবং দ্বৈত মানদণ্ড
তবে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) তাঁর বক্তব্যে রাম মন্দিরের উদ্বোধনের প্রসঙ্গও তোলেন। তিনি বলেন, “রাম মন্দির উদ্বোধন হল, সেটা সরকার করেনি। ট্রাস্ট আছে। সেখানে সাড়ে সাতশোর বেশি ভিআইপি ছিলেন। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় সামনে বসে ছিলেন। যাঁরা বসে ছিলেন, তাঁরা বহু ধর্মের লোক, বহু রুচির লোক, রাম মন্দির দেখতে গিয়েছিলেন। কেন সোনিয়া গান্ধী যাননি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাননি, আমরা গালাগালি দিয়েছি।”
এখানে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) দুই ধরনের রাজনৈতিক মানদণ্ডের কথা বলেন। একদিকে, রাম মন্দির উদ্বোধনকে নিয়ে যখন বিরোধীরা এড়িয়ে গিয়েছিলেন, তখন বিজেপি (Dilip Ghosh) ও অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে দিলীপের মতে, ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা প্রয়োজন এবং ব্যক্তি বিশেষে তাদের নির্বাচিত পথের সমালোচনা করা উচিত নয়।
দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) এই বিতর্কিত মন্তব্যগুলি আরও একবার প্রমাণ করে যে রাজনীতির ক্ষেত্রে মন্দির এবং ধর্মীয় বিষয়গুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিজেপি সবসময় মন্দির রাজনীতিকে একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং তা এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। দিলীপ ঘোষের মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, তিনি কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করেননি, বরং তিনি আরও একটি জোরালো বার্তা দিয়েছেন যে, মন্দিরের (Dilip Ghosh) উদ্বোধন নিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে কিছুটা দূরে থাকার চেষ্টা করা উচিত।