গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত মায়ানমারের (Myanmar Civil war) রাখাইন প্রদেশের পশ্চিমাংশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা দেশের সামগ্রিক মানবিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলবে। শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গৃহযুদ্ধের কারণে মায়ানমারের কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই খাদ্য উৎপাদন প্রায় তলানিতে ঠেকেছে, আর এই অবস্থার মধ্যেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
ট্রাম্প ফেরায় নিষেধাজ্ঞা-মুক্ত হবে ১৯ টি ভারতীয় সংস্থা, আশায় নয়াদিল্লি
বিশেষ করে রাখাইন প্রদেশের পশ্চিমাংশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা (Rohingya Crisis) জনগোষ্ঠীর বসবাস, যারা ইতিমধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার। এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তাদের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং ভারতকে শরণার্থীর নতুন ঢেউয়ের চাপ নিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। রোহিঙ্গা সংকট ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে, আর এই নতুন সংকট ওই চাপকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
জামাত-ই-ইসলামির ‘গোপন সমর্থন’ নিয়ে প্রিয়ঙ্কার লড়াই? সিপিএমের অভিযোগে চাপে কংগ্রেস
মায়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধের প্রভাব অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই পড়েছে। তবে কৃষি উৎপাদন তলানিতে নামার কারণে খাদ্যসংকটের সম্ভাবনা আরও বেশি হয়ে উঠেছে। দেশটির বহু অংশে কৃষকদের চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে দ্রুত বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। সাধারণ মানুষ খাদ্যসামগ্রী কিনতে ক্রমেই অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে যদি দুর্ভিক্ষের প্রকোপ শুরু হয়, তাহলে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইউএনডিপি সতর্ক করেছে।
গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের কারণে শরণার্থী সংকটের চাপ বাংলাদেশ এবং ভারতের উপর পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে, এবং দুর্ভিক্ষের শিকার হলে আরও অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ ও ভারতের দিকে পালিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারেন। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং এই নতুন পরিস্থিতিতে তাদের সামাল দেওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
মায়ানমারের এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবিক সহায়তা এবং খাদ্য সরবরাহ বাড়ানো হলে কিছুটা হলেও এই সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা মায়ানমারের নাগরিকদের সহায়তার জন্য এগিয়ে আসার কথা ভাবছে, তবে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর সমাধানের জন্য গৃহযুদ্ধ বন্ধে রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
ভারতের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোও এই সংকটের প্রভাব অনুভব করতে পারে। এজন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।