নয়াদিল্লি, ২৮ সেপ্টেম্বর: দিল্লির (India Politics) মেহরাম নগর এলাকায় মুঘল যুগের প্রাচীন সাম্রাজ্যের অবশিষ্টাংশ খালি করার নোটিশ জারি হওয়ায় বিরোধী দলগুলির মধ্যে ক্ষোভের ঢেউ উঠেছে। এই এলাকা, যা ১৭শ শতাব্দীর মুঘল সম্রাট শাহজাহান এবং অওরঙ্গজেবের আমলে নির্মিত ‘কাতরা’ (কাফেলা সারাই) এর অংশ, দীর্ঘদিন ধরে বাসিন্দাদের জন্য বাসস্থান।
দিল্লি ক্যান্টোনমেন্ট বোর্ডের পক্ষ থেকে জারি করা এই নোটিশে বলা হয়েছে, এই জমি ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর অধীনে পড়ে এবং এটি অবৈধ দখল হিসেবে বিবেচিত। নোটিশে ১০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ এলাকা খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা হাজার হাজার পরিবারের মাথায় হাত। এই ঘটনা নিয়ে আপ (আম আদমি পার্টি)-এর দিল্লি ইউনিটের সভাপতি সৌরভ ভরদ্বাজ কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “আজ মেহরাম নগরের বাসিন্দারা এই কারণেই একটি মহাপঞ্চায়েত ডেকেছেন।
এখানে বহু বছর ধরে বাস করে আসা মানুষদের পুরো গ্রাম খালি করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। লোকেরা এখানে তাদের সম্পূর্ণ পরিবার নিয়ে থাকে। কেউ কীভাবে এমনভাবে খালি করে যাবে? দিল্লির সমস্ত গ্রাম তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই লোকেদের উচ্ছেদ করা উচিত নয়।” মেহরাম নগরের ইতিহাস মুঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
এটি মূলত একটি কাফেলা সারাই ছিল, যেখানে বণিক এবং যাত্রীরা বিশ্রাম নিত। ১৬৬০ সালে শাহজাহান এবং অওরঙ্গজেবের আমলে নির্মিত ‘ওল্ড দরওয়াজা’ এই কমপ্লেক্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) দ্বারা ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে স্বীকৃত। দীর্ঘকাল ধরে এই এলাকায় হাজার হাজার পরিবার বাস করে আসছে, যাদের মধ্যে অনেকেই দরিদ্র শ্রমিক এবং দৈনন্দিন যাত্রী।
২০১১ সালে একই ধরনের নোটিশ জারি হয়েছিল, যখন হোম মিনিস্ট্রি এবং দিল্লি সরকারের মধ্যে বিকল্প জমির খোঁজ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সমাধান না হওয়ায় বাসিন্দারা এখনো সেখানে রয়েছে। এবারের নোটিশটি রক্ষণাবেক্ষণের নামে ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের আপত্তির কারণে আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইনটাচ (ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর ইন্ডিয়ান হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ)-এর ফেজ থ্রি প্ল্যানে এই স্থানটি পুনরুদ্ধারের জন্য নির্বাচিত ছিল, কিন্তু জমি বিতর্কের কারণে কাজ আটকে গেছে।
ভারত-পাক ম্যাচে নিয়ম ভাঙলে জেল! সঙ্গে মোটা অঙ্কের জরিমানা
মেহরাম নগরের মহাপঞ্চায়েতে আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ এই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এই পঞ্চায়েতে উপস্থিত আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, আপ নেতা এবং অন্যান্য বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা। ভরদ্বাজ আরও বলেছেন, “এই নোটিশটি কেবল একটি এলাকার বাসিন্দাদের উপর আঘাত নয়, বরং দিল্লির ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের অপমান। মুঘল যুগের এই স্থানটি দিল্লির ইতিহাসের অংশ, এবং এটিকে ধ্বংস করা যাবে না। সরকারকে অবিলম্বে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে।”