পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ার আগেই বাংলার রাজনীতিতে যেন বাজতে শুরু করেছে ভোটের বাদ্দি। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal assembly elections) আগে ফের শুরু হয়েছে দলবদলের জল্পনা। একুশের ভোটের আগে যেমন দেখা গিয়েছিল যোগদান মেলা, তেমনই আবহ যেন ফের তৈরি হচ্ছে। তবে এবারের কেন্দ্রবিন্দু এক প্রবীণ নেতা, যিনি সাংসদ হিসেবৈ হ্যাট্রিক করেছেন এবং জাতীয় রাজনীতিতেও সুপরিচিত। গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নতুন নয়, তবে এবার প্রকাশ্যে সেই পথে হাঁটতে চলেছেন বলে রাজনৈতিক মহলে চর্চা জোরাল।
Also Read | সাসপেন্ড হয়েই পদত্যাগ তেলঙ্গানা বিধান পরিষদের শীর্ষ নেত্রীর
দলীয় কোন্দল, অন্তর্কলহ এবং দীর্ঘদিনের উপেক্ষায় কোণঠাসা এই নেতার রাজনৈতিক অবস্থান দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছিল। তাঁর বিরুদ্ধে একসময় দলের যুব সংগঠনের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোরদার প্রচারও হয়েছিল। যদিও সেই বিতর্ক সময়ের সঙ্গে থিতিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু নতুন নতুন বিতর্কে তিনি বারবার জড়িয়ে পড়েন। সব মিলিয়ে নিজের দলে একঘরে হয়ে যাওয়া এই সাংসদ নাকি দলত্যাগেই এখন কল্যাণ দেখছেন। তাই নীরবে গুটি সাজাতে শুরু করেছেন বলেই খবর।
ভোটের প্রচারে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করেছেন প্রকাশ্যে, কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব খুব একটা নেই। বরং রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যক্তিগত স্তরে তাঁর সঙ্গে মোদীর বোঝাপড়া বেশ ভালো। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গেও তাঁর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এমনকি বছর খানেক আগে যোগীর সঙ্গে আলাদা বৈঠকও করেন তিনি। তাই বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা যে ভিত্তিহীন নয়, সেটাই এখন মনে করছেন রাজনীতির বিশ্লেষকেরা।
Also Read | রাজ্যে পাঁচ ঘন্টা বনধের ডাক বিজেপির, তুঙ্গে রাজনৈতিক চর্চা
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদকে সব সময় দেখা গিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার পতাকা বহন করতে। সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের দিকেও তিনি বিশেষ নজর দিয়েছেন। তবে প্রয়োজনে গেরুয়া রাজনীতির সঙ্গেও তাল মিলিয়েছেন। হিন্দু সংহতির প্রতিষ্ঠাতা তপন ঘোষের মতো প্রকাশ্যে ‘জয় মা কালী’ স্লোগান দিতে কখনও পিছপা হননি। এই দ্বৈত চরিত্রের কারণেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বিভিন্ন শিবিরে রয়েছে। ফলে তাঁর পদ্ম শিবিরে যোগদান বিজেপির পক্ষে যেমন বাড়তি শক্তি এনে দিতে পারে, তেমনই ভেতরে ভেতরে ক্ষোভও জাগাচ্ছে।
এই নেতার যোগদানের জল্পনায় বঙ্গ বিজেপির ভেতরে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। বহু পদ্মকর্মী প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন— “যে নেতা এতদিন বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন, যিনি পদ্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁকে দলে টেনে আনার মানেটা কী? কর্মীদের মতামতের কোনও দাম নেই?” অনেকে আবার আক্ষেপ করে বলেছেন, “একুশের আগে দলবদলের যে ছবি দেখা গিয়েছিল, সেটাই কি আবার ফিরতে চলেছে?”
Also Read | হাতে বিষের বোতল নিয়ে নীতীশের বিরুদ্ধে উর্দু TET পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বঙ্গ বিজেপির এক অংশের মতে, দলকে শক্তিশালী করার নামে এমন সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া হয়, তবে মাটির স্তরে কর্মীরা আরও বিমুখ হয়ে পড়বেন। অনেকেই বলছেন, এইভাবে বাইরের বিতর্কিত নেতাদের দলে নিয়ে এসে প্রকৃত কর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
যদিও এই ক্ষোভ কমাতে বিজেপির একাংশ চেষ্টা চালাচ্ছে। বঙ্গ বিজেপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা আশ্বাস দিয়ে বলেছেন— “কর্মীদের মতামতকে আমরা অবশ্যই গুরুত্ব দেব। কোনও চোর বা বিতর্কিত নেতাকে দলে নেওয়া হবে না। বিজেপি কর্মীদের রক্ত-ঘামের মূল্য আমরা জানি।”
তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি কৌশলগত কারণে এই প্রবীণ সাংসদকে দলে টানার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে রাজ্য স্তরের ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে গ্রহণ করতে হবে। কারণ, ভোটের আগে সংখ্যার অঙ্ক এবং প্রভাবশালী মুখের প্রয়োজনীয়তাই হয়ে ওঠে মুখ্য।
সব মিলিয়ে, বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে দলবদলের হাওয়া বইছে। সেই হাওয়ায় ভেসে আসছে প্রবীণ নেতার নাম, যিনি মোদী-যোগী ঘনিষ্ঠ হলেও এতদিন ছিলেন বিরোধী শিবিরে। তাঁর বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা যত বাড়ছে, ততই ক্ষোভ বাড়ছে পদ্ম কর্মীদের মধ্যে। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত তিনি সত্যিই দলবদল করেন কিনা, নাকি এই জল্পনা কেবল রাজনৈতিক অঙ্ক কষার অংশ হিসেবেই থেকে যায়।
For more updates, follow Kolkata24x7 on Facebook, Twitter, Instagram, Youtube; join our community on Whatsapp