পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) সফর স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনি নিজে সেখানে যাবেন এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন।
কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, “আমি মুর্শিদাবাদে যাব। মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনা তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করা হয়েছে। রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঘর তৈরি করবে। প্রশাসন মুর্শিদাবাদের মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি বহিরাগতদের এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদে না যাওয়ার অনুরোধ করছি। আমি রাজ্যপালকে আবেদন করছি, আর কয়েকদিন অপেক্ষা করুন, কারণ আমরা আস্থা ফিরিয়ে আনার কাজ করছি। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হচ্ছে।”
Also Read | প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি: সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পেলেন না পার্থ
এর আগে, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি শুক্রবার মুর্শিদাবাদে যাবেন এবং সেখানকার প্রকৃত পরিস্থিতি নিজে পর্যবেক্ষণ করবেন। তিনি বলেন, “আমি সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছি। আমি এই বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিতে চাই। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ করতে আমাদের আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি অবশ্যই মুর্শিদাবাদে যাব। স্থানীয় মানুষ সেখানে একটি বিএসএফ ক্যাম্প স্থাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন।” এছাড়াও, তিনি রাজভবনে মুর্শিদাবাদ সহিংসতার ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও মুর্শিদাবাদ সহিংসতার ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গত সপ্তাহে মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ প্রতিবাদের সময় সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি গ্রেফতার হয়েছেন। এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ), কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ) এবং প্রায় ৯০০ জন বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এই সংঘর্ষ তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে, যেখানে সিআইডি, কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিটের আধিকারিকরা রয়েছেন। এই দলটি ঘটনার মূল কারণ এবং দায়ীদের চিহ্নিত করার জন্য কাজ করছে।
Also Read | মোদীর আত্মনির্ভরতার স্বপ্ন ভঙ্গ! চিন থেকে বিপুল আমদানি ভারতের
মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি
মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক সহিংসতা ওয়াকফ সম্পর্কিত প্রতিবাদের সময় শুরু হয়। এই সংঘর্ষে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে এবং তাদের জন্য ঘর তৈরির উদ্যোগ নেবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তবে, রাজ্যপালের সফর এই মুহূর্তে স্থানীয় পরিস্থিতির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, রাজ্যপাল বোস মনে করেন, সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা তাঁর দায়িত্ব। তিনি স্থানীয় মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিএসএফ ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করছেন। তবে, মমতার অনুরোধের পর তিনি সফর স্থগিত করবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
মুর্শিদাবাদের ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতেও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে রাজ্যপালের সাক্ষাৎকারের সময় উপস্থিত ছিলেন এবং এই ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তবে, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বিরোধীদের উসকানিমূলক মন্তব্য এড়িয়ে চলা উচিত।
মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। তিনি রাজ্যপালকে সফর স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। অন্যদিকে, রাজ্যপাল বোস সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের উপর জোর দিচ্ছেন। আগামী দিনে এই ঘটনার তদন্ত এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া কীভাবে এগোয়, তা রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।