বাঙালির জন্য লড়াইয়ে নেমে হিন্দিতে বক্তৃতা মমতার

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি হেনস্থার অভিযোগে রাস্তায় নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর সঙ্গে আছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু…

Mamata Banerjee hindi s[eech controversy

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি হেনস্থার অভিযোগে রাস্তায় নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর সঙ্গে আছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই প্রতিবাদ মিছিলে মমতার হিন্দিতে বক্তৃতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

অনেকের মনেই প্রশ্ন মমতার প্রতিবাদ বাঙালিদের জন্য সেখানে হিন্দি ভাষা কেন। সাম্প্রতিক কালে মহারাষ্ট্রে ভাষা আন্দোলন কে কেন্দ্র করে এক হয়েছিলেন রাজ এবং উদ্ধব ঠাকরে। তারাও জনসভায় তাদের শ্রদ্ধার মাতৃভাষা মারাঠিতে বক্তৃতা দেন।

   

বাঙালির পরিচয় ও অধিকার রক্ষার জন্য লড়াইয়ে কেন তিনি বাংলার পরিবর্তে হিন্দি বেছে নিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিরোধী দলের নেতারা। সামাজিক মাধ্যমেও এই ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।গত ১১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির জয় হিন্দ ক্যাম্পে বাঙালি সম্প্রদায়ের উপর হেনস্থার অভিযোগ তুলে সামাজিক মাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন।

তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে, যেমন দিল্লি, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশে, বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের বাংলাদেশি বলে অপমান করা হচ্ছে এবং তাঁদের জল, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে। এই অভিযোগের প্রতিবাদে আজ কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত একটি মিছিলের আয়োজন করা হয়।

হাওড়া, ভাঙড়, দমদম ও সল্টলেক সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তৃণমূলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা এই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। মিছিলে মমতা ও অভিষেকের উপস্থিতি এই ইস্যুকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিল।কিন্তু মিছিলে মমতার হিন্দিতে বক্তৃতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সবাইকে অবাক করেছে।

তিনি বলেন, “বাংলা ভাষা বললেই কাউকে বাংলাদেশি বলা যায় না। বাঙালিরা ভারতের গর্ব, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় গীত বাংলা থেকে এসেছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের উপর অত্যাচার চলছে, এটা আমরা মেনে নেব না।” তাঁর এই বক্তব্যে বাঙালি পরিচয় ও অধিকারের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট হলেও, হিন্দিতে বক্তৃতার বিষয়টি বাঙালি জনমানসে প্রশ্ন তুলেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মমতার এই সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক কৌশল থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি হেনস্থার ইস্যুকে জাতীয় মঞ্চে তুলে ধরতে চাইছেন। হিন্দিতে বক্তৃতা দেওয়ার মাধ্যমে তিনি সম্ভবত দেশের অন্যান্য হিন্দিভাষী রাজ্যের মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন।”

Advertisements

তবে, এই সিদ্ধান্ত তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমর্থকদের মধ্যেও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। একজন তৃণমূল কর্মী বলেন, “আমরা দিদির সঙ্গে আছি, কিন্তু বাঙালির জন্য লড়াইয়ে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা উচিত ছিল।”বিরোধী দল, বিশেষ করে বিজেপি, এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে মমতার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে।

বিজেপি নেতা অমিত মালব্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি পরিচয়ের কথা বলছেন, কিন্তু তাঁর রাজ্যে জাল আধার কার্ড ও রেশন কার্ড ব্যবহার করে অবৈধ বাংলাদেশিরা থাকছে। তিনি বাংলাকে অপমান করা বন্ধ করুন।” এছাড়া, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য, যেখানে তিনি বাংলা ভাষাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ বলে উল্লেখ করেছেন, তা নিয়েও তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। মমতা বলেন, “বাঙালিরা ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভাষার ভিত্তিতে তাঁদের অপমান করা হলে আমরা চুপ থাকব না।”

রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুকে জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে তুলে ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে জনমত গঠনের চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলায় এই হিন্দি বক্তৃতা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে।সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

সমাজ মাধ্যমের একাংশ লিখেছেন, “মমতা দিদি বাঙালির জন্য লড়ছেন, কিন্তু হিন্দিতে কথা বলে কীভাবে বাঙালি পরিচয়কে সম্মান দেখাচ্ছেন?” আরেকজন লিখেছেন, “এটা রাজনৈতিক কৌশল। মমতা জানেন, এই ইস্যু জাতীয় স্তরে তুলতে হলে হিন্দি প্রয়োজন।”

নতুন বাস পারমিট, স্বস্তির নিশ্বাস নিত্যযাত্রীদের

এই ঘটনা বাংলার রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। মমতা ও অভিষেকের এই প্রতিবাদ মিছিল বাঙালি পরিচয় রক্ষার লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, হিন্দি বক্তৃতার সিদ্ধান্ত তাঁদের নিজের সমর্থকদের মধ্যেও প্রশ্ন তুলেছে। আগামী দিনে এই ইস্যু কীভাবে রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করে, তা সময় বলবে।