‘গণতন্ত্র হত্যায় আপত্তি আছে’, মত মমতার

মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, বিজেপি প্রতিদিন ভারতের গণতন্ত্র এবং…

Mamata on democracy

মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, বিজেপি প্রতিদিন ভারতের গণতন্ত্র এবং সংবিধানের উপর আঘাত হানা হচ্ছে।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ১৯৭৫ সালে আরোপিত জরুরি অবস্থার ৫০তম বার্ষিকীকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে বিজেপি। তারই প্রতিবাদে মমতা (Mamata) এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “আমি ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ শব্দবন্ধের তীব্র বিরোধিতা করছি।

   

সংবিধান আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের অধিকার, আমাদের মাতৃভূমির ভিত্তি। কিন্তু বিজেপি প্রতিদিন এটিকে ধ্বংস করছে। জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, তাহলে তো প্রত্যেক দিন গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করা যেতে পারে। ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে এই মুহূর্তে সংবিধান এবং গণতন্ত্রের উপর আঘাত হানা কে কেন্দ্র করে তরজা চলছে।

সেই প্রসঙ্গে মোদী সরকারকে নিশানা করে তিনি (Mamata) vআরও বলেন, “প্রতিদিন ভারতে গণতন্ত্রের হত্যা হচ্ছে। বিজেপি প্রতিদিন গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে।” তাঁর এই মন্তব্যে বিজেপি সরকারের শাসনকালে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আক্রমণ এবং রাজ্য সরকারগুলোর স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ স্পষ্ট।

সংবিধানের উপর আক্রমণের অভিযোগ (Mamata)

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) তাঁর বক্তব্যে সংবিধানকে ভারতের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যে, বিজেপি এই ভিত্তিকে দুর্বল করছে। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি এবং কার্যকলাপ রাজ্যগুলোর সাংবিধানিক অধিকারের উপর আঘাত হানছে। তিনি বিশেষভাবে রাজ্যপালদের ভূমিকার সমালোচনা করেন, যাঁদের তিনি অভিযোগ করেন যে তারা কেন্দ্রের নির্দেশে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলোর সরকারের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।

পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপালের সঙ্গে তৃণমূল সরকারের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে এই অভিযোগ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। মমতার অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে বিজেপির শাসনকালে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবহার। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাঁর মতে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো বিজেপির রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

‘সংবিধান হত্যা দিবস’ নিয়ে বিতর্ক

বিজেপি ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার ৫০তম বার্ষিকীকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে, যা কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। মমতা (Mamata) এই শব্দবন্ধকে সংবিধানের প্রতি অপমানজনক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “সংবিধান আমাদের অধিকার এবং মাতৃভূমির প্রতীক। এ

টিকে ‘হত্যা’র সঙ্গে তুলনা করা অগ্রহণযোগ্য।” তিনি আরও দাবি করেন যে, বিজেপি এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করে জনগণের মনোযোগ ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের নিজস্ব গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপের উপর থেকে দৃষ্টি সরানো যায়।

Advertisements

রাজ্য-কেন্দ্র সম্পর্কের অবনতি

মমতা (Mamata) তাঁর বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ফেডারেল কাঠামোর প্রতি অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার এবং কেন্দ্রের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে, যেমন তহবিল বরাদ্দ, আইনশৃঙ্খলা এবং প্রশাসনিক বিষয়ে, বারবার দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। মমতার মতে, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোর স্বায়ত্তশাসনকে দুর্বল করছে, যা সংবিধানের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী।

গণতন্ত্রের উপর ‘প্রতিদিনের আক্রমণ’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) দাবি করেন যে, বিজেপির শাসনকালে গণতন্ত্র প্রতিদিন আক্রমণের মুখে পড়ছে। তিনি সংসদের কার্যপ্রণালী নিয়েও সমালোচনা করেন, যেখানে তাঁর মতে, আইন পাস করা হচ্ছে পর্যাপ্ত আলোচনা ছাড়াই। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০২৩ সালের শীতকালীন অধিবেশনে ১৪৬ জন সাংসদের সাসপেনশন একটি উদাহরণ যে কীভাবে সংসদকে ‘প্রহসনে’ পরিণত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি গণতন্ত্র নয়, এটি স্বৈরাচার।”

বিজেপির প্রতিক্রিয়া

বিজেপি মমতার এই অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা দাবি করে যে, তাদের শাসনকালে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে এবং সংবিধানের প্রতি তাদের অঙ্গীকার অটুট। বিজেপি নেতারা ইন্দিরা গান্ধীর আমলের জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, সেই সময়ে গণতান্ত্রিক অধিকার এবং স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছিল। তারা মমতার অভিযোগকে ইতিহাসের বিকৃতি হিসেবে উড়িয়ে দিয়ে বলেন যে, তৃণমূল কংগ্রেস নিজেই পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ লঙ্ঘন করছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৯৭৫ সালের ২৫ জুন থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত ভারতে জরুরি অবস্থা স্থায়ী হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ সংবিধানের ৩৫২ অনুচ্ছেদের অধীনে অভ্যন্তরীণ অশান্তির কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। এই সময়ে বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার, সংবাদমাধ্যমের উপর সেন্সরশিপ এবং নাগরিক অধিকারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। বিজেপি এই ঘটনাকে ‘সংবিধান হত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে, যা বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

আধারে নাম না মিললে আটকে যাবে পিএম-কিষান কিস্তি, জেনে নিন করণীয়

গণতন্ত্র রক্ষার প্রতিশ্রুতি

মমতা (Mamata) তাঁর বক্তব্যে গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। আমরা সংবিধানকে রক্ষা করব।” তাঁর মতে, এই লড়াই কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়, বরং ভারতের গণতান্ত্রিক আদর্শ এবং সংবিধানের মূল্যবোধ রক্ষার জন্য।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। তাঁর অভিযোগ এবং বিজেপির প্রতিক্রিয়া গণতন্ত্র, সংবিধান এবং ফেডারেল কাঠামোর ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এই বিতর্ক ভারতের রাজনৈতিক গতিপথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এবং স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা তীব্র হচ্ছে।