চলতি বর্ষায় দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নদীর জল উপচে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল, ডুবে গিয়েছে চাষের জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে বর্ষার ঘনঘটা থাকলেও এ বছরের অতিবৃষ্টি একমাত্র কারণ নয় এই পরিস্থিতির। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি দোষারোপ করেছেন ডিভিসি (Damodar Valley Corporation)-কে।
প্রায় প্রতিটি প্রশাসনিক সভা থেকেই ডিভিসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, বিনা নোটিশে, পরিকল্পনা ছাড়াই জল ছেড়ে দিচ্ছে ডিভিসি। এর ফলে নিম্নভূমি অঞ্চলে আচমকা জল ঢুকে পড়ছে এবং সেখানকার মানুষ কার্যত ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন।
“ডিভিসি-র জলেই বাংলা ভাসছে”— মুখ্যমন্ত্রী
সোমবার, বোলপুরে প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানান, “ডিভিসি-র জলেই বাংলার জেলাগুলো ডুবে যাচ্ছে। আগে থেকে কোনও সতর্কতা নেই, পরিকল্পনাও নেই। রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে ওরা নিজেদের মতো করে জল ছাড়ে। তার ফলে হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “একটা সময় পর্যন্ত আমরা সহ্য করেছি। কিন্তু এবার অন্য রকম ভাবে ভাবতে হবে। আমি এবার ডিভিসির জল আটকানোর জন্য অন্য রকম পরিকল্পনা করব।”
কী সেই ‘অন্য প্ল্যানিং’?
যদিও মুখ্যমন্ত্রী এখনও তাঁর বিকল্প পরিকল্পনার বিস্তারিত খোলসা করেননি, তবে প্রশাসনিক সূত্রে ইঙ্গিত মিলছে যে রাজ্য নিজস্ব জলধারণ ব্যবস্থা, ছোট ও মাঝারি বাঁধ তৈরির দিকেই ভাবছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং’ ও অতিরিক্ত বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে তা কৃষিকাজ ও পানীয় জলের কাজে ব্যবহারের দিকেও পরিকল্পনা করা হতে পারে।
রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “ডিভিসি কোনওদিনই রাজ্যের স্বার্থ দেখেনি। তারা নিজেদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ভেবে জল ধরে রাখে, আর হঠাৎ করেই প্রচুর জল ছেড়ে দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবার নতুন করে একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে যা ডিভিসির জলছাড়ের রুটিন ও প্রভাব বিশ্লেষণ করবে এবং কেন্দ্রের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবে।”
ডিভিসি-র জবাব?
ডিভিসি সূত্রে এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। যদিও অতীতে তারা জানিয়েছে, তারা কেন্দ্রীয় নিয়ম মেনেই জল ছাড়ে এবং সেই সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানসম্মত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে এই ধরনের জলছাড়া রাজ্যের প্রতি চরম অবিচার। এটা কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায় না।”