মমতার অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির পালটা আক্রমণ

নির্বাচন কমিশনের (EC) ব্যাখ্যার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ সম্পর্কে পালটা আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি অভিযোগ করেছিলেন যে, নির্বাচন…

mamata-banerjee-allegations-bjp-counterattack-voter-list-cleanup

নির্বাচন কমিশনের (EC) ব্যাখ্যার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ সম্পর্কে পালটা আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি অভিযোগ করেছিলেন যে, নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ভূতুড়ে ভোটারদের নাম ঢুকানোর চেষ্টা করছে। তাঁর দাবি ছিল, রাজ্যের ভোটার আইডি কার্ডে একাধিক EPIC (Election Photo Identity Card) নম্বরে জাল ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তবে, নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ খণ্ডন করে জানিয়েছে, যে EPIC নম্বরে একাধিক নাম দেখা যাচ্ছে, তা পূর্বে ব্যবহৃত বিকেন্দ্রীকৃত ম্যানুয়াল পদ্ধতির কারণে হয়েছে, যা এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পরিবর্তিত হয়েছে।

অমিত মালব্য এই ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে ‘মিথ্যা’ ও ‘ভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে বলেন, “এটা দুঃখজনক যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যাচার করছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তার আসন্ন পরাজয়ের জন্য মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন। তিনি ভোটারদের মধ্যে আস্থা হ্রাস করার চেষ্টা করছেন।” তিনি আরও বলেন, “এটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক যে, মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যাচার করে নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করছেন।”

kolkata24x7-sports-News

   

এছাড়া, অমিত মালব্য নির্বাচন কমিশনকে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা পরিষ্কার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যাদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। “তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রাজ্যে তাদের ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করছে,” বলেন অমিত মালব্য। তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই এই অবৈধ ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।”

অমিত মালব্য দাবি করেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিষ্কার রাখতে নির্বাচন কমিশনকে “মাতুয়া সম্প্রদায়” এবং অন্যান্য ধর্মীয়ভাবে নিপীড়িত হিন্দু শরণার্থীদের নামের সুরক্ষায়ও কাজ করতে হবে, যারা ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন এবং পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি উভয় দলের মধ্যে তীব্র পাল্টা আক্রমণ চলছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আরও একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে তারা দাবি করেছে, বিজেপি রাজ্যে ভোটের ফল নিজেদের অনুকূলে করতে ভোটার তালিকায় অদূরে থাকা এলাকার মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে। তারা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন এবং তা নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছেন।”

তবে, নির্বাচন কমিশন এই সব অভিযোগের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা বা অনিয়ম খুঁজে পায়নি এবং একাধিক বার নিশ্চিত করেছে যে, ভোটার তালিকার কোনও ধরনের বিভ্রান্তি বা অনিয়ম থেকে জনগণকে বিভ্রান্ত হতে দেওয়া হবে না। কমিশন আরও জানিয়েছে, বর্তমানে সমস্ত ভোটার তালিকা একক এবং ডিজিটাল সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে কোনভাবেই কোনো বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে না।

এই বিতর্কের মধ্যে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপি-টিএমসি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি সামনে আসছে। বর্তমানে, রাজ্যটির নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আরও তীব্র হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও আলোচনার আশা করা হচ্ছে, যেখানে এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।