অয়ন দে, কোচবিহার: কোচবিহার (Cooch Behar) জেলার রাজনীতিতে ফের বড় ধরনের রদবদল। বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে আবারও ধাক্কা লেগেছে, কারণ তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা রাধাকান্ত বর্মন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। রবিবার দুপুরে কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন তুফানগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের রামপুর ২ নম্বর অঞ্চলের সহ-সভাপতি রাধাকান্ত বর্মন। এই যোগদান অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় পতাকা তুলে দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। এই ঘটনা কোচবিহারের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অভিজিৎ দে ভৌমিক জানিয়েছেন, রাধাকান্ত বর্মনকে তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের সাংগঠনিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “রাধাকান্ত বর্মন একজন অভিজ্ঞ ও প্রভাবশালী নেতা। তাঁর তৃণমূলে যোগদান আমাদের দলকে আরও শক্তিশালী করবে। তাঁকে ব্লক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তুফানগঞ্জ এলাকায় দলের সাংগঠনিক কাজে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।” রাধাকান্ত বর্মনের এই যোগদানকে তৃণমূল কংগ্রেস ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
কোচবিহার জেলায় বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল গত কয়েক বছর ধরে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। গত ২৩ নভেম্বর ২০২৪-এর উপনির্বাচনে কোচবিহারের সিতাই আসনে তৃণমূল কংগ্রেস লক্ষাধিক ভোটে জয়ী হয়েছিল, যেখানে বিজেপি কার্যত লড়াই করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এই পরাজয়ের পর বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথাগত রায় সম্প্রতি দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে ‘পার্টটাইম সভাপতি’ আখ্যা দিয়ে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করেন, বিজেপির বর্তমান কাঠামো ও নেতৃত্বের কারণে দল রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করতে পারছে না।
রাধাকান্ত বর্মনের তৃণমূলে যোগদান এই প্রেক্ষাপটে বিজেপির জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা। তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের রামপুর ২ নম্বর অঞ্চলে তিনি একজন পরিচিত মুখ এবং স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব রয়েছে। তাঁর এই দলত্যাগ বিজেপির গ্রামীণ ভিত্তিকে আরও দুর্বল করতে পারে। এক্স-এ একটি পোস্টে এই যোগদানের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে তৃণমূল সমর্থকরা এটিকে দলের শক্তি বৃদ্ধির একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী বলেন, “রাধাকান্ত বর্মনের মতো নেতারা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন কারণ তারা বুঝেছেন যে তৃণমূলই এখানকার মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে অনেকেই দল ছাড়ছেন।” অন্যদিকে, বিজেপির এক স্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, “এই ধরনের দলত্যাগ দলের জন্য ক্ষতিকর। তবে আমরা নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলে আবার শক্তি ফিরিয়ে আনব।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তৃণমূলের কৌশলগত পদক্ষেপ, যেমন স্থানীয় নেতাদের দলে টানা এবং উন্নয়নমূলক কাজে জোর দেওয়া, তাদের অবস্থানকে আরও মজবুত করছে। বিজেপি যদি তাদের সাংগঠনিক সমস্যা সমাধান করতে না পারে, তাহলে উত্তরবঙ্গে তাদের প্রভাব আরও কমতে পারে।
রাধাকান্ত বর্মনের তৃণমূলে যোগদানের এই ঘটনা কোচবিহারের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তুফানগঞ্জ এলাকায় তাঁর প্রভাব এবং সাংগঠনিক দক্ষতা তৃণমূলের জন্য একটি সম্পদ হিসেবে কাজ করবে বলে দলীয় নেতারা আশাবাদী। অন্যদিকে, বিজেপির জন্য এই দলত্যাগ একটি সতর্কবার্তা, যা তাদের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।