ভারতের রাজনৈতিক (Indian Politicians) ক্ষেত্রে নেতারা তাদের জনসেবা, নীতি-নির্ধারণ এবং নির্বাচনী সাফল্যের জন্য পরিচিত হলেও, তাদের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু সিদ্ধান্তও মাঝে মাঝে সংবাদের শিরোনামে আসে। এর মধ্যে অন্যতম হল বেশি বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসার ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ৬১ বছর বয়সে দলীয় কর্মী রিঙ্কু মজুমদারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনায় এসেছেন। এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বেশি বয়সে বিয়ের প্রবণতা নিয়ে নতুন করে কৌতূহল জাগিয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা এমন কয়েকজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতার কথা তুলে ধরব যারা পরিণয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তুলনামূলকভাবে বেশি বয়সে।
দিলীপ ঘোষ: ৬১-এ নতুন জীবনের সূচনা

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী মুখ হিসেবে পরিচিত দিলীপ ঘোষ সম্প্রতি ৬১ বছর বয়সে বিবাহের সিদ্ধান্ত নিয়ে সকলকে অবাক করেছেন। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ এবং বিজেপির প্রভাবশালী নেতা দিলীপ ঘোষ তাঁর দলীয় কর্মী রিঙ্কু মজুমদারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন। এই খবর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে এটিকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য খুঁজছেন। দিলীপ ঘোষের এই সিদ্ধান্ত অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের বেশি বয়সে বিয়ের ঘটনাগুলোকে পুনরায় আলোচনায় এনেছে।
দিগ্বিজয় সিং: ৬৭-এ প্রেমের বন্ধন

কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এবং মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং ২০১৪ সালে ৬৭ বছর বয়সে সাংবাদিক অমৃতা রায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই বিয়ে তৎকালীন সময়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। দিগ্বিজয় সিংয়ের প্রথম স্ত্রী আশা সিং ২০১৩ সালে ক্যানসারে মারা যান। এরপর অমৃতা রায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়। তবে দিগ্বিজয় সিং তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের এই সিদ্ধান্তকে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যান। অমৃতা রায়, যিনি পেশায় একজন সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক মহলে পরিচিত মুখ, তাঁর সঙ্গে এই সম্পর্ক রাজনৈতিক ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
জর্জ ফার্নান্দেস: ৬৮-এ বিয়ের নতুন অধ্যায়
প্রয়াত সমাজবাদী নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেস ১৯৯৮ সালে ৬৮ বছর বয়সে লীলা কাবিরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জর্জ ফার্নান্দেস, যিনি ভারতের রাজনীতিতে তাঁর সমাজবাদী আদর্শ এবং শ্রমিক আন্দোলনের জন্য পরিচিত, তাঁর এই বিয়ে তৎকালীন সময়ে বেশ আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। লীলা কাবির, যিনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক কর্মী, তাঁর সঙ্গে জর্জের সম্পর্ক তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বিয়ে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের উপর খুব একটা প্রভাব ফেলেনি, তবে ব্যক্তিগত জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে এটি স্মরণীয়।
মিলিন্দ দেওরা: ৪৬-এ বিয়ের পিঁড়ি
কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা ২০০৪ সালে ৪৬ বছর বয়সে পূজা শেঠির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। যদিও এই বয়স তুলনামূলকভাবে কম হলেও, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য কারণ মিলিন্দ দেওরা তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকা অবস্থায় এই সিদ্ধান্ত নেন। পূজা শেঠি, একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্য, তাঁর সঙ্গে এই বিয়ে মুম্বাইয়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের বেশি বয়সে বিয়ের ঘটনাগুলি প্রায়ই সামাজিক ও রাজনৈতিক মাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দেয়। দিলীপ ঘোষের মতো নেতারা যখন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেন, তখন এটি কেবল ব্যক্তিগত জীবনের বিষয় থাকে না, বরং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বিশ্লেষণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, দিগ্বিজয় সিংয়ের বিয়ে নিয়ে যেখানে ব্যক্তিগত জীবনের পছন্দ নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল, সেখানে দিলীপ ঘোষের ক্ষেত্রে কিছু মহল এটিকে তাঁর রাজনৈতিক ইমেজের অংশ হিসেবে দেখছে। সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যেখানে কেউ কেউ এটিকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রকাশ হিসেবে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বেশি বয়সে বিয়ের ঘটনা বিরল হলেও, এটি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আলোকে আলোচিত হয়। দিলীপ ঘোষ, দিগ্বিজয় সিং, জর্জ ফার্নান্দেস এবং মিলিন্দ দেওরার মতো নেতারা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সামাজিক নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজেদের পথ বেছে নিয়েছেন। এই ঘটনাগুলি কেবল তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনেরই নয়, বরং ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতারও একটি প্রতিফলন। ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও ঘটনা ঘটলে তা নিঃসন্দেহে জনমনে নতুন আলোচনার জন্ম দেবে।