মহার্ঘ ভাতা মামলায় আরও ৬ মাস সময় দাবি সরকারের

পশ্চিমবঙ্গ সরকার  (Government) বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য আরও ছয় মাস সময়ের আবেদন জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট গত ১৬ মে, ২০২৫-এ…

Government seeks 6 months time

পশ্চিমবঙ্গ সরকার  (Government) বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য আরও ছয় মাস সময়ের আবেদন জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট গত ১৬ মে, ২০২৫-এ রাজ্য সরকারকে তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিল। এই নির্দেশের মেয়াদ আজ, ২৭ জুন, শেষ হচ্ছে।

কিন্তু রাজ্য সরকার এই সময়সীমার মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে নির্দেশ পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ও পাল্টা আদালত অবমাননার (Government) নোটিশ দিয়েছে রাজ্যের মুখ্য সচিব কে। তার বদলে সুপ্রিম কোর্টে নতুন আবেদন জানিয়ে মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়নের জন্য আরও অতিরিক্ত ছয় মাস সময় চেয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

   

মামলার পটভূমি

ডিএ মামলাটি (Government) রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধের ফল। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ৫৫ শতাংশ ডিএ পেলেও, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা মাত্র ১৮ শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন, যা ২০২৫ সালের এপ্রিলে ৪ শতাংশ বৃদ্ধির পর প্রযোজ্য হয়েছে।

এই ৩৭ শতাংশের বিশাল ব্যবধান রাজ্যের প্রায় ১০ লক্ষ কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ২০২২ সালের মে মাসে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পরিশোধের নির্দেশ দিলে রাজ্য সরকার সেই রায়ের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।

সুপ্রিম কোর্টের (Government) বিচারপতি সঞ্জয় কারল এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ গত মে মাসে একটি অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করে রাজ্য সরকারকে তিন মাসের মধ্যে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ পরিশোধের নির্দেশ দেয়। এই আদেশ ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জমা হওয়া বকেয়া ডিএ-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

কিন্তু রাজ্য সরকারের (Government) পক্ষ থেকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট অভিষেক মনু সিংভি আদালতে জানান, সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ করতে গেলে রাজ্যের আর্থিক বোঝা ৪১,০০০ কোটি টাকা হবে, এমনকি ২৫ শতাংশ পরিশোধের জন্যও ১০,০০০ কোটি টাকার প্রয়োজন।

রাজ্য সরকারের আবেদন

রাজ্য সরকার (Government) তাদের সাম্প্রতিক আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানিয়েছে যে, আর্থিক সংকটের কারণে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ২৫ শতাংশ ডিএ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। তারা আরও ছয় মাস সময় চেয়েছে, যাতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা যায়।

রাজ্যের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ বন্ধ করা হয়েছে, যার ফলে রাজ্যের বাজেটের উপর চাপ পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এর আগে এই সংকটের জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করেছেন।

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Government) এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানতে চাইছে না। এটি কর্মচারীদের প্রতি তাদের উদাসীনতার প্রমাণ।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, রাজ্য সরকার ডিএ পরিশোধের পরিবর্তে বিভিন্ন উৎসব ও অপ্রয়োজনীয় খাতে অর্থ ব্যয় করছে। বিজেপি নেতা অমিত মালবিয়াও এক্স-এ পোস্ট করে এই রায়কে কর্মচারীদের জন্য “ঐতিহাসিক জয়” হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং রাজ্য সরকারের বিলম্বের জন্য সমালোচনা করেছেন।

Advertisements

কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের (Government) সংগঠন ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ’-এর নেতা ভাস্কর ঘোষ সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “এটি আমাদের অধিকারের স্বীকৃতি। আমরা প্রায় ৯১৮ দিন ধরে এই দাবিতে আন্দোলন করে আসছি।”

তবে, তিনি রাজ্যের নতুন আবেদনের সমালোচনা করে বলেন, “এটি সময় কেনার কৌশল। আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী আইনি নির্দেশ মেনে দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করুন।” কর্মচারীদের একাংশ ঘোষণা করেছে, যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিএ পরিশোধ না হয়, তবে তারা নবান্নের দিকে মিছিল করবে।

আইনি ও আর্থিক দিক

সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ পরিশোধ করতে রাজ্যের প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই অর্থ সংগ্রহ করা রাজ্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সিনিয়র অ্যাডভোকেট বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, “রাজ্যের যুক্তি যে ডিএ পরিশোধে আর্থিক সংকট হবে, তা আইনি ভিত্তিতে টেকে না। রাজ্যের কাছে অবৈধ কাজে অর্থ থাকলেও কর্মচারীদের জন্য নেই।” তিনি আরও বলেন, “আদালত প্রথমে ৫০ শতাংশ পরিশোধের কথা বলেছিল, কিন্তু রাজ্যের আবেদনের পর ২৫ শতাংশে নেমে আসে।”

সুনীল ছেত্রী ফিরেও হল না শেষ রক্ষা, গোল খরায় ভুগছে ভারত

রাজনৈতিক প্রভাব

এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের (Government) রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, “আমরা আদালতের নির্দেশ পালন করব, তবে বিরোধীরা এটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।” অন্যদিকে, বিজেপি ও সিপিআই(এম) দাবি করেছে যে, রাজ্য সরকার কর্মচারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।

ডিএ মামলায় রাজ্য সরকারের ছয় মাস সময় চাওয়ার আবেদন কর্মচারীদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানি আগস্টে নির্ধারিত, যেখানে ডিএ-এর পূর্ণাঙ্গ সমতা এবং এটি মৌলিক অধিকার কিনা তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে রাজ্য সরকার কীভাবে এই আর্থিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, তা রাজ্যের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।