মোদীর ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের খতিয়ান তুলে ধরলেন ফিরহাদ হাকিম

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad-Hakim) সম্প্রতি তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টের মাধ্যমে ভারতের বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন। তিনি একটি…

Firhad-Hakim alleges modi

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad-Hakim) সম্প্রতি তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টের মাধ্যমে ভারতের বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন। তিনি একটি সংবাদপত্রের অংশবিশেষ শেয়ার করে জানিয়েছেন যে উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলিমরা, সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হচ্ছেন।

   

এই পোস্টের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি (Firhad-Hakim) বাংলার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন, যে বিজেপির শাসনাধীন রাজ্যগুলিতে মুসলিমরা নিরাপদ নন। তবে সাম্প্রতিক কসবা গণধর্ষণ কান্ড কে কেন্দ্র করে এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) সংযোগ এবং ফিরহাদ হাকিমের দ্বিমুখী ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত রাজনৈতিক মহল এর পিছনে তৃণমূলের তোষণ নীতিকেই দায়ী করেছেন।

ফিরহাদ হাকিমের (Firhad-Hakim) এক্স পোস্টে তিনি বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে বাংলায় মুসলিমরা বিজেপির হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন। তবে মুর্শিদাবাদ, মোথাবাড়ি, কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে বেলাগাম বোমাবাজি তা প্রমান করে না।

এই ধরণের ঘটনা এবং বিভিন্ন জেলায় তথাকথিত সংখ্যালঘুদের হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা প্রায় প্রত্যেক দিন ই প্রকাশ্যে আসছে। সবচেয়ে বড় কথা কসবা মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে একজন, জাইব আহমেদ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এটি ও ফিরহাদের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, কারণ রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ তৃণমূলের তোষণ নীতির অভিযোগের মধ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৫ জুন, ২০২৫, কলকাতার কসবা এলাকার সাউথ কলকাতা ল কলেজে এক ২৪ বছর বয়সী ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। (Firhad-Hakim) অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনাটি সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে রাত ৮:৫০-এর মধ্যে কলেজের নিরাপত্তা প্রহরীর কক্ষে ঘটেছে। প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র (৩১), যিনি একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দক্ষিণ কলকাতা জেলার সাধারণ সম্পাদক, তাকে সহ দুই বর্তমান ছাত্র জাইব আহমেদ (১৯) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০) গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এছাড়া, কলেজের নিরাপত্তা প্রহরী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৫)ও গ্রেপ্তার হয়েছেন। ভিকটিমের অভিযোগে বলা হয়েছে, মনোজিৎ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা প্রত্যাখ্যান করায় তিনি এবং তার সঙ্গীরা তাকে হকি স্টিক দিয়ে মারধর করে এবং ঘটনাটির ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেল করার হুমকি দেয়। মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের অভিযোগ নিশ্চিত হয়েছে।

Advertisements

ফিরহাদ হাকিম (Firhad-Hakim) কসবা গণধর্ষণ মামলায় মনোজিৎ মিশ্রের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছিলেন। তিনি বলেন, “টিএমসি’র আদর্শে বিশ্বাসী কেউ এমন অপরাধ করতে পারে না।” তবে, বিজেপি নেতা অমিত মালব্য এবং সুকান্ত মজুমদার মনোজিৎ মিশ্রের সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের ছবি শেয়ার করে দাবি করেছেন যে মিশ্র তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং কাউন্সিলর কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

এমনকি, একটি ছবিতে ফিরহাদ হাকিমকে মনোজিৎ মিশ্রের পাশে দেখা গেছে, যা তিনি প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করেছিলেন। এই ঘটনা তৃণমূলের তোষণ নীতি এবং নারী নিরাপত্তার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

মমতার তোষণ নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী

কসবা গণধর্ষণ মামলা রাজ্যে ব্যাপক জনরোষ সৃষ্টি করেছে। ছাত্র সংগঠন, বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামপন্থী দলগুলি কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল করেছে। জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ) এই ঘটনার স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নজর নিয়েছে এবং তিন দিনের মধ্যে মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

ফিরহাদ হাকিমের (Firhad-Hakim) সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবেদন তুলে ধরা এবং কসবা মামলায় তার দ্বিমুখী ভূমিকা তৃণমূলের তোষণ নীতির অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে। মনোজিৎ মিশ্রের সঙ্গে তৃণমূলের সংযোগ এবং ফিরহাদের প্রাথমিক অস্বীকৃতি বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাবের ইঙ্গিত দেয়। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে নারী নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার প্রশ্ন তুলেছে। আগামী দিনে তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।