মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যৌথ সংবাদ সম্মেলন কূটনীতির ইতিহাসে এক বিতর্কিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। দুই দেশের নেতাদের মধ্যে এই সাক্ষাৎ ইন্টারনেটে ঝড় তুলে, এবং এ নিয়ে সমালোচনা ও জল্পনার সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিকদের সামনে তাদের কথোপকথন যেভাবে সামনে এসেছে, তা কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন দৃষ্টিকোণ খুলে দিয়েছে।
জেলেনস্কি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন তাঁর পরিচিত সামরিক পোশাকে, যদিও তিনি যুদ্ধের ময়দান থেকে অনেক দূরে ছিলেন। তিনি তাঁর দেশবাসীর কাছে একটি ‘চুক্তি’ নিয়ে জবাবদিহি করতে গিয়ে উত্তেজিত ছিলেন। অন্যদিকে, ট্রাম্প তাঁর আক্রমণাত্মক বক্তব্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। ট্রাম্পের মতে, জেলেনস্কি এমন একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়েছেন তাঁর দেশ এবং বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছেন।
ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এই কৌতুক অভিনেতা (Zelensky) তাঁর সমৃদ্ধ দেশকে ধ্বংস করেছেন, এবং এখন তিনি আমাদের নিকট থেকে প্রতিদান চাইছেন।” তিনি ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রকাশ করেন, যা তিনি দাবি করেন রাশিয়া-অধিকৃত এলাকায় রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, “বিশ্বের প্রতিটি দেশ খনিজ সম্পদের দিকে নজর রাখে, এবং ইউরোপ ও আমেরিকা সর্বদা এই সম্পদগুলোকে লক্ষ্য করে, তবে সেগুলো যেন যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত না হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এক দর্শকের প্রশ্ন ছিল, কেন জেলেনস্কি স্যুট পরে হোয়াইট হাউসে আসেননি। ট্রাম্প এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “এটি একটি অপমানজনক প্রশ্ন নয়, বরং বিশ্বের হতাশা প্রকাশের বিষয়।” তিনি আরও বলেন, “ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট (Zelensky) তাঁর দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন নয় এবং তাঁকে সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতি দেখার প্রয়োজন।”
ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্টও জেলেনস্কির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, জেলেনস্কি কোনো কৃতজ্ঞতা দেখাননি সেই প্রেসিডেন্টের প্রতি, যিনি পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। মার্কো রুবিও, একজন রিপাবলিকান সিনেটর, বলেছেন, “এমন একজন প্রেসিডেন্টের পক্ষে এমন মন্তব্য অনুচিত, যিনি একে একে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষতি করছেন।”
রাশিয়া সম্পর্কে ট্রাম্পের বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উঠে আসে। তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ হওয়ার কথা ছিল না।” ১৯৯০ সালে ন্যাটো সম্প্রসারণ নিয়ে রাশিয়াকে একটি ‘আয়রন-ক্ল্যাড গ্যারান্টি’ দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্পের দাবি, রাশিয়া বিশ্বাস করেছিল তারা ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে, কিন্তু ইউক্রেনের সদস্যপদ প্রার্থনার কারণে সব কিছু পাল্টে যায়।
এদিকে, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর ন্যাটোর সমর্থন বাড়ে, কিন্তু ইউক্রেনের সদস্যপদ ততদিনে সম্ভব ছিল না। ২০২২ সালে জেলেনস্কি ন্যাটোর দ্রুত সদস্যপদ চেয়েছিলেন, কিন্তু ন্যাটো কোন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। বর্তমানে, ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে তা কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ছাড়াই।
এ ছাড়া, চুক্তির মূল বিষয় ছিল ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ, যা বেশিরভাগ রাশিয়া-অধিকৃত এলাকায় অবস্থিত। ইউরোপও ইউক্রেনের ২১টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের প্রতি আগ্রহী, তবে তারা যুদ্ধে অংশ নিতে চায় না। ট্রাম্প এই অনীহার সমালোচনা করেন এবং বলেন, “যুদ্ধ শেষ করতে চাই, কিন্তু জেলেনস্কির হাতে কোনো শক্তি নেই।”
অতএব, ইউক্রেনের জনগণের কষ্ট কমাতে এবং এই যুদ্ধের শেষ দেখতে, জেলেনস্কিকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এমনটাই জানান ট্রাম্প।