রাম নবমী উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি রাজনীতির মঞ্চও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। একদিকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন, অন্যদিকে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস এই উৎসবকে ‘শান্তি ও বিশ্বাসের’ প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন।
রবিবার রাজ্যে পালিত হয় রাম নবমী উৎসব। বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত হয় শোভাযাত্রা, পূজা এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই উৎসব ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক আবহে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
সোমবার বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, “যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় রয়েছেন, ততদিন পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।” তিনি দাবি করেন, রাজ্যে দুর্নীতি, নারী নির্যাতন এবং মন্দিরে হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, “এবার যেভাবে রাম নবমী পালিত হয়েছে, তা একটা সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত। বহু তৃণমূল নেতা বুঝতে পেরেছেন, ‘রাম রাজ্য’ পশ্চিমবঙ্গে আসতে চলেছে, তাই তাঁরা শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন।”
দিলীপ ঘোষ এও বলেন, “কিছু জায়গায় পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশকে অবশ্যই তদন্ত করতে হবে। না হলে হিন্দুরা আগামীবার নিজের মতো প্রস্তুতি নেবে।”
অন্যদিকে, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস রবিবার রাস্তায় নেমে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং পুজোয় অংশ নেন। রাজভবন মিডিয়া সেলের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “রাম নবমীর দিন, মাননীয় রাজ্যপাল কলকাতার কিছু অংশে ঘুরে বেড়িয়েছেন, পূজা করেছেন এবং রাস্তায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা খুশি যে উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। অনেকেই রাজ্যপালের সক্রিয় ভূমিকাকে প্রশংসা করেছেন।”
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব পালনের জন্য রাজ্য সরকার, বিরোধী দল, নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণের সতর্কতা ও সহানুভূতির জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়।”
রবিবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। কলকাতা, হাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নামে হাজার হাজার ভক্ত। ধর্মীয় সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
তবে কিছু এলাকায় সামান্য উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে। কিছু জায়গায় পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও পুলিশ প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রাম নবমীকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজনৈতিক ময়দানে ধর্মীয় আবেগের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। দিলীপ ঘোষের বক্তব্য রাজনৈতিক বার্তা বহন করে, যেখানে তিনি রাজ্যের শাসক দলের প্রতি কড়া সমালোচনা করেন।
অন্যদিকে, রাজ্যপাল শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব পালনের বার্তা দিয়ে প্রশাসনের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন। তাঁর এই মন্তব্যের মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখার ইঙ্গিতও পাওয়া যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাম নবমী পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং এর রাজনৈতিক তাৎপর্যও বাড়ছে। বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে এই ইস্যুতে মতবিরোধের ফলে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালনের জন্য প্রশাসনের ভূমিকাকে প্রশংসা করা হলেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে উদ্বেগ রয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যাতে হিংসা না ছড়ায়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে সকল পক্ষকে।