বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন, অভিযোগ করে বলেছেন যে রাজ্যে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা গুন্ডারা বোমা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছে এবং এতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস শাসনের অধীনে পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসী এবং অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ সহজ হয়ে উঠেছে, এবং সরকারের উদাসীনতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে।
তিনি বলেছেন, “বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের গুন্ডারা পশ্চিমবঙ্গে এসে বোমা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছে। প্রতিটি জেলায় বোমা তৈরির খবর আসছে, কিন্তু রাজ্য সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সরকারের বন্ধুত্বই হচ্ছে এই ধরনের সমাজবিরোধীদের সাথে।”
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি
দিলীপ ঘোষের অভিযোগ অনুযায়ী, তৃণমূল সরকারের মদতে রাজ্যে অপরাধের হার লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। তিনি দাবি করেছেন, “বাংলায় এখন আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। যতদিন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার থাকবে, অপরাধ বাড়তেই থাকবে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে এবং তা রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, দিলীপ ঘোষ সম্প্রতি হওয়া মেদিনীপুর উপনির্বাচনের প্রসঙ্গেও তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেন, “তৃণমূল এখানে নির্বাচন করে এবং তারা আগেই ঠিক করে নেয় কাকে ভোট দিতে হবে। নির্বাচনের আগে তৃণমূল এক অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করে।”
বিজেপি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ
দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেন যে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির দপ্তর ভাঙচুর করছে এবং বিরোধী কণ্ঠকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তার ভাষায়, “তারা আমাদের অফিসে হামলা চালানো শুরু করেছে এবং এখন তারা একটি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচনে জয়লাভ করার চেষ্টা করবে।”
নির্বাচনী আবহে উত্তেজনার পরিবেশ
নভেম্বর ১৩ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, যার মধ্যে রয়েছে সিতাই (এসসি), মাদারিহাট (এসটি), নৈহাটি, হরোয়া, মেদিনীপুর এবং তালডাঙরা আসন। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হবে ২৩ নভেম্বর। এই উপনির্বাচনের আগে দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
বিজেপি নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, এই নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধীদের দমিয়ে রাখতে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। তার অভিযোগ, তৃণমূল নির্বাচনী পরিবেশকে এমনভাবে প্রভাবিত করছে যে সাধারণ মানুষও এখন ভীত এবং সংবদ্ধভাবে তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না।
মমতা সরকারকে সরাসরি আক্রমণ
দিলীপ ঘোষ আরও দাবি করেন যে, “যখন তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে, তখন থেকেই রাজ্যে একের পর এক সমাজবিরোধী গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। যেকোনো রাজনৈতিক নেতার স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারই হোক বা বিরোধী দলের কার্যকলাপ – প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা বাধা প্রদান করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে এবং এই সরকার তাদের শাসনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”
সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবৈধ কার্যকলাপ
পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন দিলীপ ঘোষ। তার অভিযোগ অনুযায়ী, “অনুপ্রবেশকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে এসে বোমা তৈরির কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তৃণমূল সরকার এই সব অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।”
এছাড়া, ভারতের সীমান্ত সুরক্ষা বল (এসএসবি) সহ বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা এই ধরনের অনুপ্রবেশের খবর সম্পর্কে জানলেও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দিলীপ ঘোষ।
দিলীপ ঘোষের এই অভিযোগের জবাবে তৃণমূল কংগ্রেস এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে সংঘাতের মাত্রা বাড়ছে এবং রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।