বুধবার দুপুরে ঘাটালের জলবন্দি পরিস্থিতি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ঘাটাল এসডিও অফিসে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিক, মহকুমা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা, এবং বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন ঘাটালের সাংসদ তথা অভিনেতা দেব অধিকারীও। দীর্ঘ আলোচনার পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দেব জানালেন, এই বছর বৃষ্টির পরিমাণ অনেকটাই বেশি, এবং তার সঙ্গে ডিভিসি (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন)-র ছাড়া জল পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
দেব বলেন, “এবার প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে ডিভিসি থেকেও জল ছাড়া হয়েছে একাধিকবার। ফলে ১৯ জুন থেকে ঘাটাল কার্যত জলের নিচে ডুবে আছে। এখনও জল নামেনি! সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে। তবে আমাদের লক্ষ্য এখন একটাই—মানুষকে সঠিকভাবে উদ্ধার করা হয়েছে কি না, ত্রাণ পৌঁছেছে কি না, কেউ কোনও পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কি না।”
তিনি আরও জানান, তিনি নিজে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, প্রশাসনের তরফে যথেষ্ট দায়িত্বশীলভাবে উদ্ধারকাজ চালানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, এনডিআরএফ এবং পঞ্চায়েত স্তরের প্রতিনিধিরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্যাপীড়িতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেক জায়গায় নৌকো ব্যবহার করে উদ্ধারকাজ করা হয়েছে। জলমগ্ন এলাকায় শুকনো খাবার, পানীয় জল, ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অস্থায়ী শিবিরে বহু মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, যেখানে রান্না করা খাবার, শৌচালয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঘাটালের দীর্ঘদিনের সমস্যা ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন দেব। তিনি বলেন, “এই প্ল্যান নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে রাজ্য সরকার, সবাই জানেন ঘাটালের কী রকম অবস্থা। আমি নিজে বিষয়টি বারবার লোকসভায় তুলেছি। তবে এখনও পর্যন্ত স্থায়ী সমাধান হয়নি। মানুষ প্রতি বছর এই দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আমি আবারও অনুরোধ করব—ঘাটালের মানুষের কথা ভাবুন। মাস্টার প্ল্যানের দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।”
দেব আরও জানান, “একটা বিষয় স্পষ্ট—এখানে শুধু অতিবৃষ্টি দায়ী নয়, ডিভিসি-র জল ছাড়াও বড় ভূমিকা নিচ্ছে। সুতরাং রাজ্য ও কেন্দ্র দুই তরফ থেকেই সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। রাজনৈতিক তরজা বাদ দিয়ে আমাদের উচিত, একযোগে সমস্যার সমাধান খোঁজা।”
বৈঠকে স্থানীয় বিধায়ক ও জনপ্রতিনিধিরাও তাঁদের এলাকা ভিত্তিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কোথায় বাঁধ ভেঙেছে, কোথায় সড়ক ধ্বস্ত হয়েছে, কোথায় এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি—এই সমস্ত বিষয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা।
ঘাটালের সাধারণ মানুষ এই দুর্যোগের মধ্যে একে অপরকে সাহায্য করছেন। স্থানীয় যুবসমাজ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ক্লাব—সকলেই মিলে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে অংশ নিচ্ছেন। প্রশাসনও তাঁদের এই সহযোগিতার প্রশংসা করেছে।
সবমিলিয়ে, প্রশাসনিক বৈঠকের পর দেবের মন্তব্য ও আশ্বাস ঘাটালের মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে। তবে ঘাটালবাসীর একটাই দাবি—এই পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান চাই। বছরে বছরে জলবন্দি হয়ে থাকা নয়, বরং নিরাপদ ঘাটালই চাই সকলে।